সোমবার, অক্টোবর ৭, ২০২৪

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার একমাত্র স্টেডিয়াম মাঠটি বিশাল একটি পুকুরে রূপ নিয়েছে। স্টেডিয়ামটি এখন খেলাধুলার পরিবর্তে মাছ চাষের উপযোগী হয়ে পড়েছে। সদরের এই একমাত্র খেলার মাঠটি বছরের প্রায় ছয় মাসই পানির নিচে থাকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা।

দেশের প্রথম প্রবর্তিত উপজেলা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর। মির্জাপুর সদয় কৃষ্ণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটিই মির্জাপুরের স্টেডিয়াম মাঠ হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৯ সালের ২ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির প্রতিশ্রুতী প্রকল্প হিসেবে ঢাকা বিভাগীয় উন্নয়ন বোর্ডের অর্থে নির্মাণাধীন স্টেডিয়াম মাঠটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক রেজাউল ইসলাম।

এরপর থেকে এই মাঠ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খেলাধুলায় মুখরিত থাকত। বিকেল হলেই মাঠে চলে আসত শিশু কিশোররা। ক্রীড়াপ্রেমী দর্শকরাও একটা ভালো বিকেল অতিবাহিত করতেন। এছাড়া মির্জাপুরের বয়স্ক ব্যক্তিরাও মাঠটি হাঁটার জন্য নিয়মিত ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এখন সেগুলো কেবলই স্মৃতি।

এছাড়া মির্জাপুর উপজেলায় বিপুল পরিমাণ সরিষা ও আলুর আবাদ হয়। সপ্তাহের শুক্রবার মির্জাপুর হাটবার। হাটবারে মাঠটি সরিষা ও আলুর হাট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই হাটে ঢাকার বড় বড় সরিষার তেল কোম্পানি সরিষা ক্রয় করতে আসে। কিন্তু মাঠটি পানির নিচে থাকায় এ উপজেলার কৃষর ও কোম্পানির লোকজন সে সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

সর্বশেষ কর্দমাক্ত স্থানে ২৬ মার্চের অনুষ্ঠান করা হয়। এরপর থেকে মাঠটি খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বর্তমানে মাঠটি একটি বিশাল পুকুরে পরিণত হয়েছে।

মির্জাপুর বাজার একাদশের সাবেক অধিনায়ক মির্জাপুর স্টেডিয়াম মাঠের নিয়মিত খেলোয়ার কাওছার হোসেন চপলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মির্জাপুরের একমাত্র মাঠটি বছরের অধিকাংশ সময় পানির নিচে থাকে। এ কারণে ছাত্র ও যুবসমাজ খেলাধূলা থেকে সরে গিয়ে মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

সাবেক কৃতি ফুটবলার খন্দকার মুফাজ্জল হোসেন দুলালের সঙ্গে কথা হলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মাঠের এই অবস্থায় যুব সমাজকে খেলার দিকে ধাবিত করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের যুব সমাজকে একটি সুন্দর ক্রিড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে অতি দ্রুত মাঠটির একটি সুন্দর ব্যবস্থা হবে বলে তিনি আশা করেন।

মির্জাপুর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মাঠটি প্রকৃতপক্ষে সদয় কৃষ্ণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের। মাঠের উত্তরপাশে ক্রীড়া সংস্থার একটি ভবন রয়েছে। এ মাঠটিই স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত। মাঠটি মাটি দিয়ে ভরাটের জন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকার প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মির্জাপুর সদয় কৃষ্ণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মাঠটি ভরাট করা জরুরি হয়ে পড়েছে। শহরের চাইতে মাঠটি কমপক্ষে ৬ ফুট নিচু। এর ফলে শহরের পানি এবং বৃষ্টির পানি মাঠে জমে পুকুরে পরণত হয়। মাঠের পশ্চিম পাশ দিয়ে পায়ে হাঁটার যে রাস্তাটি রয়েছে সেখান দিয়ে শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন কমপক্ষে ৫/৭ হাজার লোক সহজেই চলাফেরা করতে পারে। মাঠটি পানির নিচে থাকায় শহরে জনসাধারণের চাপ বেড়েছে। এ কারণে প্রতিনিয়ত শহরে যানজট লেগেই থাকছে।

মির্জাপুর সদয় কৃষ্ণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. শামীম আল মামুন বলেন, বিদ্যালয়ের পক্ষে মাঠটি ভরাট করা সম্ভব নয়। এই মাঠে সরকারি বেসরকারি সকল প্রকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সরকারি ভাবে মাঠটি ভরাটের জন্য একাধিকবার বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। মাঠটি মাটি দিয়ে উচু করা অত্যান্ত জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা ক্রিড়া সংস্থার সভাপতি ও মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত সাদমীন বলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -