শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪
Homeআন্তর্জাতিকযে কারণে হারলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম

যে কারণে হারলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম)। যিনি ভারতীয় বাহিনীর সাহায্য ছাড়াই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা আক্রমণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত এই কিংবদন্তি ভোটযুদ্ধে হেরে গেছেন। দেশব্যাপী এ নিয়ে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ। তাঁর কর্মী-সমর্থক ও দলের নেতা-কর্মীরাও অনেকটা নীরব নিস্তব্ধ। অনেকেরই ধারণা ছিল মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য অবদান ও শেষ বয়সে সম্মান রক্ষার্থে হলেও বঙ্গবীরকে সংসদে পাঠাবেন সখীপুর-বাসাইলের জনগণ। কিন্তু ফলাফলের উল্টো চিত্রে হতাশ হয়েছেন কর্মী-সমর্থকেরা।
স্থানীয় বাসিন্দা, ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে কাদের সিদ্দিকীর পরাজয়ের মূল কারণ নতুন ভোটারদের আধিপত্য ও আওয়ামী লীগের তরুণ প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয়ের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা। নবীন ভোটারদের পছন্দ তরুণ প্রার্থী অনুপম শাজাহান জয়, অন্যদিকে বয়স্কদের সমস্যা বন বিভাগের যন্ত্রণা ও জমির খাজনা দিতে না পারা।
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় দেখা গেছে, তরুণেরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনুপম শাজাহান জয়ের পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। তাঁর আশপাশে বয়স্কদের চেয়ে তরুণদের উপস্থিতি বেশি ছিল। ভোটকেন্দ্রেও তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।
অন্যদিকে কাদের সিদ্দিকী তরুণদের কাছে টানতে অনেকটা ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর সভা-সমাবেশে বয়স্ক ও নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। কিন্তু নারী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে টানতে অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে কাদের সিদ্দিকীর নির্বাচনী কর্মী বাহিনী। এ কারণে নৌকা এবং গামছা মার্কার ভোটের ব্যবধান তৈরি হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টে যোগ দেওয়া, তৃণমূল পর্যায়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা, মাঠ পর্যায়ে নিজের জনপ্রিয়তার ব্যাপারে দৃঢ়তা ও নেতা–কর্মীদের পরামর্শ গ্রহণ না করাও বঙ্গবীরের পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এক নেতা বলেন, কয়েক মাস আগে বঙ্গবীর তাঁর বোন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর সাবেক মেয়র সানোয়ার হোসেন সজীব পুনরায় দলে যোগ দেন। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়। এতে দীর্ঘদিনে ঝিমিয়ে পড়া দল ও দলের নেতা–কর্মীরা বেশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো আমাদের দক্ষ কর্মী বাহিনী ছিল না।
তিনি আরও বলেন, সখীপুরের মানুষের জমি নিয়ে সমস্যা, মাদক সমস্যা। এসব সমস্যা বঙ্গবীর সমাধান করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সখীপুরের মানুষ সেটা বুঝল না।
ভোট গ্রহণের আগের দিন সন্ধ্যায় সাংবাদিকেরা বঙ্গবীরকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘সরকার যদি আপনাকে ভিন্ন কোনো পন্থায় নির্বাচিত করতে চায়—সে ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা কী হবে?’
এমন প্রশ্নের জবাবে দৃঢ়কণ্ঠেও কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘কীভাবে! চুরি করে? এই বয়সে আমি ভিন্ন পন্থায় সংসদে যেতে চাই না। আমাকে মরতে হবে, আল্লাহর কাছে এর জবাব কে দেবে ? তিনি আরও বলেন, অনুপম শাহজাহান জয় (আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী) যদি পাশ করে আমি তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেব।’
এ বিষয়ে সরকারি মুজিব কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. আলীম মাহমুদ  বলেন, বঙ্গবীর একজন হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন। এ কথা অনস্বীকার্য যে, মুক্তিযুদ্ধে এ অঞ্চলের জন্য তাঁর অনবদ্য অবদান রয়েছে। তিনি মনে করেছিলেন সখীপুর-বাসাইলের মানুষ তাঁকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের ভোটারেরা সম্ভবত ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা কম। এ কারণে তরুণেরা তাঁর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়নি।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -