এ ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সেতুতে ডাবল লেন না হওয়া পর্যন্ত এই বিপর্যয় থেকে মুক্তি মিলবে না। এ জন্য আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেতুর লেন না বাড়িয়ে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ালে গতি আরও কমে আসবে। ফলে বিপর্যয় আরও বাড়বে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রেলমন্ত্রী কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শনে আসলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে টাঙ্গাইলে যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার সাড়ে তিন ঘণ্টা পর উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়। দুর্ঘটনায় পড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসটি অতিরিক্ত যাত্রীর ভারে লাইনচ্যুত হয়েছিল বলে চালক তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন। এদিকে শুক্রবারের এ দুর্ঘটনার কারণে উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিম রেলের ট্রেনগুলোর সময়সূচিতে বড় বিপর্যয় তৈরি হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় রেল স্টেশন মাস্টার মাসুম আলী খান জানান, টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাশে লাইনচ্যুত হওয়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি শুক্রবার বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে গন্তব্যে ছেড়ে যায়। এর আগে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে ট্রেনটির একটি বগির দুটি চাকা বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ে সেতুতে ওঠার আগে লাইনচ্যুত হয়। এই দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও এই পথ দিয়ে ঢাকা থেকে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে উদ্ধারকারী ট্রেন গিয়ে বগিটি লাইনে তোলার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে স্টেশন মাস্টার মাসুম জানান। এবার ঈদযাত্রার শুরু থেকে পশ্চিম রেলের অর্থাৎ রাজশাহী ও রংপুরগামী ট্রেনগুলো দেরিতে ছাড়ছিল। যে ট্রেনটি টাঙ্গাইলে লাইনচ্যুত হয়, সেই সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু এটি ২ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট দেরিতে কমলাপুর ছাড়ে।
সিরাজগঞ্জে যাওয়ার জন্য মহাখালী বাস টার্মিনালে সকাল থেকে বসেছিলেন দীপু এন্টারপ্রাইজের সার্ভিসম্যান শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জে যাওয়ার সব কটা কাউন্টার বন্ধ। আমরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। সিলেট রুটের এনা পরিবহনের টিকেট পাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছিলেন সুনামগঞ্জের সামিহা আক্তার। তিনি বলেন, ছোট বাচ্চাদের নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। কখন টিকেট পাব, কখন গাড়িতে উঠব জানি না। সকাল ৯টার সময় বাসা থেকে বের হয়েছিলাম, যেন টিকেট আগে পাওয়া যায়, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। টার্মিনালে এসেই দেখি বিশাল লাইন। এনা পরিবহনের এক কর্মী বলেন, ‘বাসের ব্যবস্থা করেই টিকেট ছাড়ছি যাতে টিকেট পাওয়ার পর বেশি অপেক্ষা করতে না হয়।’
বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাশে যানবাহনের দীর্ঘ সারি ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে বঙ্গবন্ধু সেতুর দুপাশে প্রায় ৫৮ কিলোমিটারের মতো দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জ অংশে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের ফলে গাড়ি টানতে পারেননি চালকরা।
তবে এবারের ঈদযাত্রায় মহাসড়কে কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এবারকার ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে ফেরিঘাটে। সমস্যা হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে, নদীতে প্রচন্ড স্রোত। মাওয়া থেকে জাজিরা প্রান্তেও প্রচন্ড স্রোত। সেখানে মাঝে মাঝে ফেরি বন্ধ হয়ে যায়। নদীর স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। যার কারণে গাড়ি আসতে পারছে না। শুক্রবার সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে ঈদযাত্রা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে এসে এসব কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার ভারী বর্ষণ ছিল, সিগন্যাল ছিল, নিম্নচাপের কারণে ঘরমুখো যাত্রা স্বস্তিদায়ক ছিল না। তবে শুক্রবার যাত্রা স্বস্তিদায়ক আছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর ভারী বর্ষণ না হলে আমার মনে হয় ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। কারণ রাস্তায় কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা শুধু ফেরিঘাটে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করছি। এখানে ভিজিলেন্স টিম আছে। পুলিশ, র্যাব, বিআরটিএ কাজ করছে। রংপুরগামী একটি পরিবহন অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছিল বলে তাদের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না, অন্যদিকে শুক্রবারও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সকাল থেকেই লোকজন লঞ্চ টার্মিনালের দিকে ছুটতে দেখা যায়। শুক্রবার সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রায় সবগুলো লঞ্চই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ছাদেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।
রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে যানে যানজটের কারণে ঈদযাত্রায় নেমে আসে চরম অস্বস্তি। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
গাজীপুর : ঈদযাত্রায় গাজীপুরের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার পথে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশ এই যানজটের মূল কারণ হিসেবে সড়কে পানি জমে থাকা এবং সড়কের উন্নয়ন কাজকে দায়ী করেছেন।
রাজবাড়ী : বৈরী আবহাওয়া, ফেরি সংকট ও ঘাট সমস্যার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রী, চালক ও সংশ্লিষ্টরা। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পশুবাহী ট্রাকের চালক ও ব্যাপারীরাও। দীর্ঘ সময় বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়ছে কোরবানির অনেক গরু। ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি চাপের কারণে শুক্রবার দিনভর মহাসড়কে অসংখ্য যানবাহন আটকে থাকতে দেখা গেছে।
মাদারীপুর : শুক্রবার সকাল থেকেই আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটা লঞ্চ, স্পিডবোটগুলোতে কানায় কানায় ভরপুর ঘরমুখো যাত্রীদের। তবে বাতাসের কারণে পদ্মা নদীতে তীব্র ঢেউ থাকায় বেশিরভাগ যাত্রীরাই ফেরিতে পার হচ্ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েকগুণ ভাড়া গুণে কাঁঠালবাড়ী থেকেও বাড়তি ভাড়া গুণে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন যাত্রীরা। ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে এবার কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌপথে মোট ১৮টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ ও ২ শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে।