শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫
Homeআন্তর্জাতিককরোনায়  চলছে অনলাইন শপিং প্রতারণা

করোনায়  চলছে অনলাইন শপিং প্রতারণা

করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে দীর্ঘসময় মানুষ ঘরে বন্দি। সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর, বন্ধ হয়ে যায় অফিস, দোকান-শপিংমলও। দীর্ঘদিন পর সাধারণ ছুটি শেষে সীমিত পরিসরে সব খুললেও, এখনও স্বাভাবিক হয়নি জীবনযাত্রা। এখনও মানুষ ঘর থেকে বেরুতে পারেনি। সংক্রমণের ভয় এখনও কাটেনি। কারণ, করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার মতো প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি। তাই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি স্বাস্থবিধি মেনে চলাই আজ বড় প্রতিষেধক। এই নিয়ম মেনেই সারা দেশের মানুষ এখনও ঘরবন্দি। বাইরে না বেরুলেও থেমে নেই জীবন, থেমে নেই প্রয়োজন।

জীবন ধারণের প্রয়োজন মেটানোর জন্য মানুষের প্রয়োজন বিভিন্ন পণ্য। বর্তমান সময় প্রযুক্তির। আর তাই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ঘরবন্দি মানুষের নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে এগিয়ে আসছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পেজ অথবা ওয়েবে গিয়ে প্রয়োজনীয় অর্ডার দিয়ে পণ্য কিনতে পারছে। এক্ষেত্রে ক্রেতার পক্ষে পণ্য সরাসরি দেখার সুযোগ নেই, তাকে পণ্যের ছবি এবং বর্ণনা দেখেই পণ্য পছন্দ করে ক্রয়াদেশ দিতে হয়। আর এই সুযোগটিই নিচ্ছে কিছু প্রতারক। তারা অনলাইনেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নানাভাবে মানুষকে প্রতারিত করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

নিউজ টাঙ্গাইল অনুসন্ধানে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি শুরুর পরই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে অসংখ্য অনলাইন শপিং পেজ, গ্রুপ ও সাইট খুলে বসেছে একাধিক প্রতারক চক্র। এসব চক্র নানা রকমের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করছে। এর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, করোনা চিকিৎসা সহায়তা সামগ্রী, নেগেটিভ-পজিটিভ সনদ সরবরাহ, বিভিন্ন পেজ-লিঙ্কে ক্লিক করে অর্থ উপার্জন, বিদেশি বন্ধু সেজে উপহার পাঠানো, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি সেজে নিয়োগের নামে অর্থ আত্মসাৎসহ নানাভাবে প্রতারণা শুরু করেছে। এক্ষেত্রে করোনা চিকিৎসা সামগ্রী তথা মাস্ক, পিপিই, গ্লাভস, পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, পালস অক্সিমিটার ও জীবাণুরোধী বিভিন্ন যন্ত্র বিক্রির নামে প্রতারণা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করেও পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আবার এক পণ্য দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের অন্য পণ্য। এসব চক্র বাজারের নির্ধারিত দামের চেয়ে অবিশ্বাস্য রকম মূল্য হ্রাসের বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করে ফাঁদে ফেলছে। প্রতারকরা তাদের পেজগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য পণ্যের নিচে বিভিন্ন কাস্টমারের পজিটিভ রিভিউর স্কিনশটও উল্লেখ করে বিশ্বাসযোগ্য করছে। আবার কিছু চক্র ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পেজ, লিঙ্ক ও গ্রুপ খুলে তাতে ক্লিক করলেই মিনিটে মিনিটে টাকা উপার্জন হবে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। বেশিরভাগ সময় এসব লিঙ্কে ক্লিক করার পর আইডি হ্যাকসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট লুটে নিচ্ছে চক্রের সদস্যরা।

অচিরেই তথ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্তৃক অনলাইনে প্রতারণার  প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ আমলে নিয়ে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্তের দাবি করছি। কারা কীভাবে প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, সেটা খুঁজে বের করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবেই এ ধরনের প্রতারণা চলতে দেওয়া যায় না। এ শুধু বর্তমান প্রেক্ষাপটেই নয়, যেকোনো সময়েই মানুষকে ঠকিয়ে মুনাফা অর্জনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরি। সবার সম্মিলিত ভ‚মিকাই অপরাধীকে নিবৃত্ত করতে পারে। সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। কোথাও প্রতারিত হলে, যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরারব অভিযোগ করতে হবে, যাতে করে অপরাধী পরবর্তীতে নতুন করে অপরাধের সুযোগ না পায়। একই সঙ্গে প্রশাসনকেও কঠোর হতে হবে। যেকোনো ধরনের প্রতারণাকে শক্ত হাতে দমনের উদ্যোগ নিতে হবে। অপরাধীকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই।

আজ মানুষ ঘরে বন্দি। অসহায় এই সময়ে যদি মানুষ প্রতারিত হয়, তাহলে সেটি সাধারণের জন্য যেমন বেদনার, তেমনি যারা সত্যিকার অর্থেই সৎভাবে ব্যবসা করতে চাইছেন, যারা এই বিপদের দিনে যথাযথ বিনিময়ের মাধ্যমে সঠিক পণ্য মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে চাইছেন, তাদের প্রতিও না জেনে বিরূপ ধারণা তৈরি হতে পারে। তাই মানুষ যেন প্রতারিত না হয়, কেউই যেন মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এবং সৎপথে যারা ব্যবসার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, তাদেরকে সহায়তা করতে হবে।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -