সোমবার, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
Homeটাঙ্গাইল জেলাঘাটাইলকালের সাক্ষী ঘাটাইলের ‘সাগরদিঘী’

কালের সাক্ষী ঘাটাইলের ‘সাগরদিঘী’

 

এম সাইফুল ইসলাম শাফলু :
টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সাগরদিঘীর বুকে গভীর জল নিয়ে পাল রাজ বংশের শাসনামলে খনন করা দিঘী আজও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে প্রায় ৬৫ কি:মি: পূর্ব উত্তরে ঘাটাইল উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে সভ্যতার নির্ভিক সাক্ষী এ দিঘী।
জানা যায়, পালরাজাদের শাসনামলে এ অঞ্চল ছিল ঘন বন আর জঙ্গলে ভরা, এলাকাটির পূর্ব নাম ছিল লোহানী। কীর্তিমান পুরুষ সাগর রাজা দিঘী খনন করার পর তাঁর নামের সাথে দিঘী যোগ করে এলাকার নামকরণ করা হয় সাগরদিঘী। সেই থেকে এ পাহাড়ী জনপদটি সাগরদিঘী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পাড়সহ দিঘীর আয়তন মোট ৩৬ একর। দীঘির পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে সাগরদিঘী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাগরদিঘী দাখিল মাদ্রাসা, অস্থায়ী এলজিইডি বাংলো এবং সাগরদিঘী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। এক সময় দিঘীর যৌবনের আলোক ছটায় মুগ্ধ হতো হাজারো প্রকৃতি প্রেমী দর্শনার্থী। সবুজের সমারোহে ভরপুর ছিল দিঘীর পাড়। আর সবুজ পত্রপল্লবের নান্দনিক পরিবেশ বিষন্ন মনেও দোলা দিয়ে যেত চোখের পলকে। স্বচ্ছ পানির ঢেউ আচড়ে পড়ত পাড়ে। গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ রোদ্দুরে অচেনা পথিকের ¯œান ও তৃষ্ণা দুই-ই মেটাতো এর জল। বন্যপ্রাণি আর জীববৈচিত্রের অভয়ারণ্য হিসাবেও পরিচিত ছিল এ অঞ্চলটি। ধীরে ধীরে গড়ে উঠে মানুষের বসবাস। ওই সময়ে এ অঞ্চলে পানির সংকট ছিল তীব্র। সাগর রাজা তার প্রজাদের সুপেয় পানির জন্য এখানে দিঘী খননের সিদ্ধান্ত নেন। রাজার নির্দেশে ৩৬ একর জমির উপর দিঘী খননের কাজ শুরু করেন প্রজারা। সময় লাগে প্রায় দুই বছর। খননকাজে অংশ নেয় প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। পর্যাপ্ত গভীরতা থাকা সত্তেও রহস্যজনকভাবে দিঘীর তলানীতে পানি না উঠায় রাজা চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। কোন এক রাতে রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হন যদি তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে দিঘীতে নামানো হয় তাহলে দিঘীতে পানি উঠবে। রাজা ঘুম থেকে জেগে সকালে রাণীকে সব খুলে বললেন। রানীও প্রজাদের সুখের কথা চিন্তা করে দিঘীতে নামার প্রয়াস ব্যক্ত করেন। দিনক্ষণ ঠিক করা হলো। রাজার বিষ্ময়কর এমন সিদ্ধান্তের বাস্তব দৃশ্য নিজ চোখে দেখার জন্য কৌতুহলী হাজারো জনতার ভিড় জমায়। শুকনো দিঘীতে রাণী নামলেন। দিঘীর তলদেশ থেকে পানি উঠতে শুরু করলো। মুহুত্বেই রাণীর সমস্ত শরীর পানিতে ডুবে যেতে লাগলো। রাণীকে আপ্রাণ চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারলেন না রাজা। প্রজাদের সুখের জন্য রানীর আতœবিসর্জনের মাধ্যমে পূর্ণতা পেল সাগর রাজার দিঘী । সাগর রাজার নামেই পরে দিঘীটির নামকরণ হলো সাগরদিঘী। এ অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বি লোকদের বিশ^াস এখনো রাণীর আত্মা এ দিঘীতেই ঘুড়ে বেড়ায়। তাই তারা রাণীর আত্মাকে শান্ত রাখতে বিভিন্ন সময় পূজা অর্চনা করে থাকেন। সাগর রাজা এ অঞ্চলে কোন রাজ প্রাসাদ রেখে না গেলেও তাঁর স্মৃতিবিজরীত দিঘীটি আজ কালের গর্ভে অনেকটাই মলিন হতে চলেছে। অবৈধভাবে দিঘীর পাড় দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে পোল্ট্রি খামার। লেয়ারের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ওই দিঘীর পানিতে। লীজ নিয়ে দিঘীটিতে করা হচ্ছে মাছ চাষ। দিঘীটি তাঁর নিজস্ব সৌর্ন্দয্য হারিয়েছে । ঐতিহ্যবাহী দিঘীটির জমি দখলমুক্ত ও সংরক্ষনের দাবী জানিয়েছেন সুধীমহলসহ এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন জানান, সাগরদিঘীকে পর্যটন কেন্দ্র করার আবেদনটি মন্ত্রনালয়ে মঞ্জুর হয়েছে। তিনি এর সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও সহযোগিতা করার দাবি জানান।

 

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -