চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘টিকটক-ভাইরাল’ ক্যাটাগরি রাখার আবেদন এই অভিনেত্রীর!
চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। প্রতি বছর চলচ্চিত্র শিল্পে অবদান রাখার জন্য এ সম্মাননা দেয়া হয়ে থাকে। ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২১’-এর বিজয়ীর তালিকা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ্যে এসেছে বিজয়ীদের সম্ভাব্য একটি তালিকা। এ তালিকা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নন্দিত নায়িকা অঞ্জনা। এবার তার সুরে সুর মিলিয়েছেন চিত্রনায়িকা নূতন।
এ নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন অভিনেত্রী নূতন। লেখার শুরুতে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে টিকটক ক্যাটাগরি নাই? টিকটক আর ফেসবুক ফলোয়ার ক্যাটাগরি রাখার আবেদন করছি। পাশাপাশি ভাইরাল ক্যাটাগরি রাখলে মন্দ হয় না! জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে এমন লেখা লিখতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। এ দেশে নায়িকা হওয়া এখন আমার জন্য পাপ মনে হয়। মাঝে মাঝে আমার বাবার প্রতি আমার খুব রাগ হয়। আমি সাউথের মেয়ে ছিলাম, বাবার জন্ম সেখানেই। ফুপু সাউথের নায়িকা ছিলেন, সেখানে থাকলে আমিও নায়িকা হতাম যদি ভাগ্যে থাকত। তাই ভালো ছিল। বড় তারকা না হলেও অসম্মানিত বা লজ্জিত তারকা হতাম না- এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। চেহারা আর নাচ দিয়ে কিছু না কিছু করতে পারতামই।’
চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করায় নায়িকা অঞ্জনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নূতন বলেন, ‘‘অঞ্জনাকে ধন্যবাদ। আজীবন সম্মাননা বলতে যে এ দেশে কিছু আছে, তা ভুলেই গিয়েছিলাম। ‘ওরা ১১ জন’ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। আমি সেই চলচ্চিত্রের ক্ষুদ্র একজন অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও যে আজীবন সম্মাননা পেতে অনেক কিছু করা লাগে তা আমার জানা নাই। আরো যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয় তাও আমার অজানা। তাই ৫০ বছরের চলচ্চিত্র জীবনে তা আর জানতে চাই না। যদিও আজীবন সম্মাননা আমার কাছে বিশাল কিছু না। এর চেয়ে বড় পুরস্কার আমি বহুবার পেয়েছি মানুষের কাছ থেকে এবং আমি বিশ্বাস করি, মৃত্যু পরবর্তী সময়েও আমি কিছু মানুষের কাছ থেকে আজীবন সম্মাননা পেয়ে যাব; সে কাজ আমি করেছি।’’
নায়িকা অঞ্জনার সুরে সুর মিলিয়ে এই নায়িকা বলেন, ‘আমি নিজেকে আজীবন সম্মাননার মতো যোগ্য মনে করছি না। তবে অঞ্জনার সুরে উচ্চারণ করছি সুচরিতার নাম! সেও কি যোগ্য না? সুচরিতার যোগ্যতা মাপার মাপকাঠি নির্বাচকদের হয়নি, হবেও না। আমি না হয় অভিনেত্রী না। দয়া করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারকে তেল দিয়ে তৈলাক্ত করবেন না। তাহলে হাত পিছলে পড়ে যাবে; যা আর ঘর অবদি নেওয়া যাবে না। একসময় এই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর কাজ করতাম। তারপর অনেক ত্যাগ-পরিশ্রম-ভালোবাসা-চেনা-জানা এবং দক্ষতা দিয়ে তা পেতে হতো। পাওয়ার পরে কত আলোচনা কত আয়োজন। আর এখন তা যাকেতাকে অন্য পুরস্কারের মতো দেয়া হয়।’
বিষয়টি আরো ব্যাখ্যা করে নূতন বলেন, ‘ব্যাপারটা এমন যে, পুরস্কার দিয়ে ভালোবাসা নেয়া। অনেকটা ফেসবুক অ্যাওয়ার্ডের মতো। যার ফলোয়ার হাইপ বেশি সে পুরস্কার নিয়ে ছবি তুলবে, তাতে স্পন্সর আসবে বা পুরস্কারের জাত বাড়বে। কিন্তু এটা তো সরকারি পুরস্কার, তাহলে জাত বাড়ানোর কি আছে! না, জাত বাড়ানোর কিছু নেই তবে টেনে নামানোর অনেক কিছু আছে। একটা সিনেমা করেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে পারেন; তা নিয়ে আমি দ্বিমত করছি না বা যারা পেয়েছেন তারা অবশ্যই যোগ্য। তবে যারা দিচ্ছেন তারা? এমন যেন না হয় যাকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে সেই লজ্জিত হচ্ছেন, যে কেন এই পুরস্কার পেলাম? তা হলে দুঃজনক! এই দেশে সম্মাননাকেও সম্মানহানী হতে হয়।’
একটি বিষয় নিয়ে ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছেন নূতন। তা উল্লেখ করে নূতন বলেন, ‘আমাদের ৭০/৮০/৯০ দশকের চলচ্চিত্র অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য বাংলা চলচ্চিত্র এখন অনেকাংশে অভিশাপ, শুধু নির্বাচন আর মাঝে মাঝে চামড়ার মুখে মাথার মুকুট বলে চালানো আর সম্মানিত বলে অসম্মানিত করা ছাড়া কিছুই না। যা নায়ক রাজরাজ্জাকও দেখে গেছেন। কাঞ্চন-ডলি জহুরসহ যারাই এবার পুরস্কৃত হচ্ছেন সবার জন্য শুভকামনা-ভালোবাসা। কাঞ্চন আর ডলি শতভাগ যোগ্য। আমি ভয়ে আছি অন্য কারণে যে, হুট করে আবার টিকটক বা ফেসবুকের মহরত নায়ক-নায়িকা বা সিনেমা ৫টা করে পুরস্কার ৩টা পাওয়া নায়ক-নায়িকা এসে যদি বলে, আপনি আর আমি সমান সমান। আমিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি, আপনিও পেয়েছেন। সে কথার উত্তর আমি কি দিয়ে দেব। এমনিতেই ভয়ে আছি, অনেকে বলে আপু আপনি এত বড় নায়িকা আপনার ফেসবুক ফলোয়ার নেই কেন? আমার ৫/৬ লাখ ফলেয়ার। শেষে একটা কথাই মনে পড়ল বিচারক তোমার বিচার করবে কে?’
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।