সোমবার, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
Homeটাঙ্গাইল জেলাটাঙ্গাইলে বানভাসিদের মানবেতর জীবনযাপন, ডায়রিয়ার প্রকোপসহ ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ!

টাঙ্গাইলে বানভাসিদের মানবেতর জীবনযাপন, ডায়রিয়ার প্রকোপসহ ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ!

নিজস্ব প্রতিবেদক: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা চরাঞ্চলে বানভাসি মানুষদের দুর্ভোগ কমছেই না। দীর্ঘ মেয়াদি হচ্ছে বন্যা। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষগুলো এবং দেখা দিয়েছে মানুষের নিরাপদ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও নিরাপদ স্যানিটেশন। দেখা দিয়েছে শিশুদের ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ। বানভাসিদের ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় পানিবন্দি মানুষগুলো কেউ উঁচু জায়গা, কেউ বা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এদিকে, টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা যায়, কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীর পানি কমলেও গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকাল ৯ টা থেকে শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৯ টা পর্যন্ত যমুনা নদীর পোড়াবাড়ি পয়েন্ট ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিদৎসামীরার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জেলার ধলেশ্বরী ও ঝিনাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীতেও পানি বাড়ছে।

শুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল কালিপুর, জয়পুর, পুংলীপাড়া, রেহাইগাবসারা, চন্ডিপুর, মেঘারপটল, রাজাপুর, অর্জুনা ইউনিয়নের শুশুয়া, বাসুদেবকোল, ভদ্রশিমুলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়- কয়েকদিন ধরে একটু একটু করে পানি কমছিল। কিন্তু আজ শুক্রবার ফের নতুন করে কিছুটা পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলেও কমছে ধীরে ধীরে। ফলে এখনো চরের শতশত ঘরবাড়ি পানিতে ভাসছে ও তলিয়ে রয়েছে।

এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চরের লোকজন তাদের গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে- শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। চরের পানিবন্দি ঘরবাড়িতে টিউবওয়েল, স্যানিটেশন, রান্নাঘর তলিয়ে রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে পানি সরবরাহ করে প্রয়োজনীয় কাজ করছেন বানভাসি মানুষগুলো। কিছু কিছু এলাকায় ত্রাণ পেলেও এখনো অসংখ্য পরিবার ত্রাণ সামগ্রী সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগও করছেন।

গাবসারা ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়ির পাশে থৈই-থৈই পানি। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ১২ দিন ধরে রোজগার নেই। চরাঞ্চলে পানি থাকায় কাজকাম বন্ধ। একদিকে ঋনের কিস্তি ও অন্যদিকে ধার-দেনার টাকায় সংসার চালাচ্ছি। এখন পরিবার নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছি। নদীর পানি একেবারে না কমা পর্যন্ত চরের জনজীবন স্বাভাবিক হবে না। সরকার যদি এ সময়ে সহযোগিতা করতো তাহলে অনেক উপকার হতো।

একই এলাকার বাসিন্দা আজগর আলী। তিনি অভিযোগ করে বলেন- টানা দুই তিন সপ্তাহ যাবৎ পানিবন্দি হয়ে থাকলেও আমাদের মতো দরিদ্রদের কেউ খোঁজ-খবর নেয় না। তাছাড়া মেম্বার-চেয়ারম্যানদের যারা কাছের লোক ও আত্মীয়-স্বজন রয়েছে তারাই সরকারের ত্রাণ সহযোগিতা পাচ্ছে। যারা এগুলো পাচ্ছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই স্বচ্ছল পরিবার। এদিকে, পানির কারণে হাত-পায়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শিশুরা ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে ভুগছে। এখনো কোনো স্বাস্থ্যকর্মীর দেখা মেলেনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মামুনুর রশীদ জানান, উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে চরাঞ্চলসহ ৪টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দিক-নির্দেশনায় দেড় হাজারের অধিক দরিদ্র মানুষের মাঝে মানবিক সহায়তা হিসেবে শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও পানি মজুদ রাখার পাত্র বিতরণ করা হয়েছ এবং এসব ত্রাণ সামগ্রী পর্যাপ্ত রয়েছে। ত্রাণ সহায়তা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানসহ সকল ধরণের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -