নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: টাঙ্গাইলে চাঞ্চল্যকর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার বাদিপক্ষের আরো একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরে এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামী টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সরকার দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার উপস্থিতিতে এ সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়ে এই মামলায় এখন পর্যন্ত আদালতে মোট ১৭ জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) আদালত কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। সেই অনুয়ায়ী করা নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে কারাগার থেকে বেলা পৌনে ১২টার দিকে এ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী সাবেক এমপি রানাকে টাঙ্গাইলের বিচারিক আদালতে আনা হয়। পরে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক রাশেদ কবির চাঞ্চল্যকর মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর হত্যা মামলার সাক্ষী টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ রৌফ সাক্ষ্য দেন এবং পরে তাকে জেরা করেন আসামীপক্ষের আইনজীবী। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আদালতের বিচারক কার্যক্রম শেষ করে।
পরে আদালত এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী (১৮ জুলাই) পরবর্তী তারিখ দেন। এ নিয়ে এই মামলায় এখন পর্যন্ত আদালতে মোট ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত হয়েছে। পুলিশ এ মামলায় ৩২জনকে সাক্ষী করেছে।
জানা যায়, দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর সাবেক এমপি রানা বিগত ২০১৬ সালের (১৮ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইল আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন না-মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৩ সালের (১৮ জানুয়ারি) রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি টাঙ্গাইল সদর মডেল থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরবর্তীতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে এবং বিগত ২০১৬ সালের (৩ ফেব্রুয়ারি) আমানুর রহমান খান রানা (তখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন) ও তার তিনভাইসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
তদন্ত চলাকালে বিগত ২০১৪ সালের (১১ আগস্ট) সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানার ঘনিষ্ঠ কর্মী আনিসুর রহমান রাজা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে তিনদফায় মোট ১৫ দিন রিমান্ড শেষে ওই বছরের (২৭ আগস্ট) টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদত হোসেনের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অপর আসামী মোহাম্মদ আলী গ্রেপ্তার হন একই বছরের (২৪ আগস্ট)। তিনি দশদিনের রিমান্ড শেষে (৫ সেপ্টেম্বর) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ নাজমুন নাহারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
উভয় আসামীর জবানবন্দিতে ফারুক আহমদ হত্যাকান্ডে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তার ছোট ভাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করলে এই হত্যাকান্ডের সাথে খান পরিবারের চার ভাইয়ের জড়িত থাকার কথা প্রথম প্রকাশ পায়।
এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনার সঙ্গে আমানুর রহমান খান রানার অপর ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তদানিন্তন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও টাঙ্গাইল জেলা বণিক সমিতির সভাপতি জাহিদুর রহমান খান কাকন যুক্ত বলে মোহাম্মদ আলী তার জবানবন্দিতে প্রকাশ করেন। বিগত ২০১৭ সালের (৬ সেপ্টেম্বর) আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। বর্তমানে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে আমানুর রহমান খান রানাকে বাদ দিয়ে তার পিতা আতাউর রহমান খানকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। আতাউর রহমান খান দলের মনোনয়ন পেয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হন।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।