নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: টাঙ্গাইলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় তিন লাখ বানভাসী মানুষ। যদিও সরকারী দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে পর্যাপ্ত ঔষুধ ও খাবার স্যালাইন রয়েছে বানভাসী মানুষের জন্য কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল অন্য চিত্র। কেবল মাত্র ইউনিয়ন পরিষদে নাম মাত্র মেডিকেল ক্যাম্প করে দায় সারছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস। দূর্গম চরাঞ্চলে কোন ধরনের মেডিকেল সহায়তা কিম্বা পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেটের কোন সরবরাহ নেই। টাঙ্গাইল জেলায় কোথায় নেই সাপ কাটা রুগীর জন্য ভ্যাকসিন।
কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুরের পল্লী চিকিৎস ডাঃ জহিরুল জানান, প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন ডায়রিয়া রুগীকে চিকিৎসা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা বেশী আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারী ভাবে পানি বিশুদ্ধ করন ট্যবলেট সরবরাহ করা হলে এই পরিস্থিতি হতো না। কেবল বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে তিনি জানান।
হুগড়া ইউনিয়নের চর হুগড়ার গ্রামের হাফেজা বেগম জানান, আমার টিউবলের অর্ধেক বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। পানি ফুটিয়ে খাবো সেই অবস্থাও নেই।কোথায় একটু শুকনো জায়গা নেই, কিম্বা শুকনো খড়ি-যাবা নেই। পানি বিশুদ্ধ করন বড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় গেলে পাওয়া যাবে তাও জানি না। ফলে এই টিউবলের পানি খাচ্ছি।
টাঙ্গাইল হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্ঝল হোসেন খান তোফা বলেন, আমি এখন পর্যন্ত সরকারী ভাবে কোন ধরনের পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট কিম্বা খাবার স্যালাইন ত্রান সাহায্য হিসেবে পাইনি। আমার ইউনিয়ন অত্যন্ত দূর্গম চরাঞ্চল । সেখানেই এমনেতেই খাবার পানির অভাব রয়েছে। এই বন্যার সময় অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। কিছু পানি বিশুদ্ধ করন ট্যবলেট পেলে ভালো হতো।
কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহম্মদ আলী জিন্নাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, তার ইউনিয়নের ২৯ হাজার লোকের জন্য পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট বরাদ্দ পেয়েছেন মাত্র ৫০০ পিস। এ ছাড়া খাবার স্যালাইন মেলেনি এক প্যাকেট ও। তিনি জানান, এই বরাদ্দ তার ইউনিয়নের চাহিদার তুলনায় অনেক অপ্রতুল।
টাঙ্গাইল জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারী আঃ রৌফ জানান, আমরা পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট দিচ্ছি না। যেখানে সম্ভব আমরা বিশেষ পদ্বতিতে কয়েক হাজার লিটার পানি একবারে বিশুদ্ধ করে দিচ্ছি। ইতিমধ্যে ভুঞাপুরের গোবিনদাসী. গাবসারা ইউনিয়ন ও কালিহাতীতে কয়েক হাজার লিটার পানি বিশুদ্ধ করন করা হয়েছে। তবে আমাদের কাছে সাপে কাটা রুগীর কোন ভ্যাকসিন নেই ।ঢাকা থেকে আমাদের মেডিকেল টিম আসবে। তখন টাঙ্গাইল রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করবে।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডাঃ শরীফ হোসেন খান জানান, টাঙ্গাইলে সাপে কাটা রুগীর জন্য ভ্যাকসিন নেই।ইতিমধ্যে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে একজনকে সাপে কেটেছিল। তিনি বেঁচে আছেন। তবে পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন মজুত আছে। বন্যায় আত্রান্ত উপজেলা প্রতি ৫০ হাজার পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট ও ২০ হাজার খাবার স্যালাইন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিকেল টিম কাজ করছে। বন্যা দূর্গতদের কোন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হবে না বলে তিনি আশা বাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, টাঙ্গাইলের ৬টি উপজেলা, ২টি পৌর সভা, ২৪টি ইউনিয়নের ৩ হাজার ৫ শত পরিবার তথা প্রায় পৌনে তিন লাখ লোক বন্যা কবলিত।টাঙ্গাইল সদরের চরাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন ও ভুঞাপুর ও নাগরপুর উপজেলা বিশেষ ভাবে বন্যা কবলিত। এ ছাড়া প্রায় ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি বন্যা কবলিত হয়েছে।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।