টাঙ্গাইল একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ। বহু অতীত ঐতিহ্য আর বাংলার চির পরিচিত লোক-সংস্কৃতি ইতিহাসে ক্রমধারার উত্তরাধিকারী। প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যে আর লোক-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যে টাঙ্গাইল জেলার অবস্থান অনেক উঁচুতে। টাঙ্গাইলের লোক-ঐতিহ্য নিয়েও প্রবাদ বচন রচিত হয়েছে। যেমন- ‘চমচম, টমটম ও শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি।’ প্রবাদ প্রবচনের ছড়াটিতে টাঙ্গাইলের তিনটি লোক ঐতিহ্যের কথা উঠে এসেছে। টাঙ্গাইলের তৈরি চমচম মিষ্টি আর তাঁতের শাড়ি পৃথিবী খ্যাত। টমটম গাড়িও একদা ছিল টাঙ্গাইলের লোক ঐতিহ্যের উল্লেখযোগ্য যানবাহন।
টাঙ্গাইল তথা বাংলাদেশের লোক ঐতিহ্যের দুইটি প্রধান নিদর্শন হলো- মাটির মৃৎপাত্রের ফলক আর নক্শী কাঁথা। নকশী কাঁথার উপর বাণিজ্যিক ভূত চেপেছে আর মৃৎ ফলক হিন্দুয়ানী বলে বর্জিত। ফলে আমাদের লোক-ঐতিহ্যগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া টাঙ্গাইলের কাঁসা-পিতল, বাঁশ-বেতের তৈরি তৈজষপত্রগুলোও খ্যাতির দাবীদার। টাঙ্গাইলের লৌকিক খেলাধুলোগুলোও লোক-ঐতিহ্যের উল্লেখযোগ্য উপাদান।
তাছাড়া টাঙ্গাইলের ভূখন্ডে কয়েকটি মুসলিম ঐতিহ্য এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ও উপজাতির ঐতিহ্যও রয়েছে। মুসলিম ঐতিহ্যের মধ্যে আটিয়ার মসজিদ, ধনবাড়ির মসজিদ ও মাজার, কদিম হামজানির মসজিদ, খামার পাড়ার মসজিদ ও মাজার প্রভৃতি। হিন্দু ঐতিহ্যের মধ্যে গুপ্ত বৃন্দাবন, পাকুটিয়ার সৎসঙ্গ আশ্রম, বারো তীর্থ, আনন্দ মঠ ইত্যাদি। আর টাঙ্গাইলের গারোদের ওয়ানগালার ঐতিহ্যও কম নয়।
টাঙ্গাইলের জনপদে রাজা-জমিদারদের বাড়িরও একটা ঐতিহ্য আছে। একেক রাজা-জমিদার তাদের মনের মাধুরী দিয়ে তার বাসস্থান নির্মাণ করেছেন। শুধু তাই নয় বাঙালীদেরকে শিক্ষা দান করতে টাঙ্গাইলের জমিদারদের অবদান অপরিসীম।
পাল, সেন আমলে প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহ্য টাঙ্গাইল অঞ্চলে লুকায়িত রয়েছে। যেমন কালীদাস গ্রামে কালিদাস পন্ডিতের পুকুর। আর বায়ান্ন খাদা জমি নিয়ে রাধাকৃষ্ণ গোপিনীদের লীলা ভূমি গুপ্ত বৃন্দাবন। এখনো সাদৃশ্য ঐতিহ্যবাহী তমাল গাছ আর কাঠের যুগল রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি। পাশেই প্রাচীন পুকুর। প্রবাহিত র্ঝনা ধারার পাশে এখনো বিরাট পাথরের স্ত্তপ জেগে আছে। কৃষ্ণ বিরহে আজও বিরহী রাধার আকুতি প্রতিধ্বনিত হয় এই গুপ্ত বৃন্দাবনে। তাছাড়া কালিয়া, মহানন্দপুর, কীর্ত্তন খোলা, প্রতিমা বংশী, দাড়িয়াপুর, শহর গোপিনাথপুর, রতনগঞ্জ, বেহুলা, লক্ষ্ণিদর, গড় গোবিন্দপুর প্রভৃতি স্থানগুলো ঐতিহ্যের শিরোনাম। #সংগ্রহীত