নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রশাসন থেকে বার বার ড্রেজার ধ্বংস, শাস্তি ও জরিমানা করা সত্ত্বেও থেমে নেই বালু খেকোরা। টাঙ্গাইল সদর উপজেলা ও দেলদুয়ার উপজেলায় চলছে বালু উত্তোলন। দীর্ঘদিন ধরে এই বালু উত্তোলনের ফলে দেখা দিয়েছে নদীর পাড় ভাঙ্গন। একদিকে ড্রেজার অন্য দিকে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিলীন হতে চলেছে আশপাশের এলাকার বাড়ি-ঘর ও আবাদি জমি। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষেরা।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী একটি মহল স্থানীয় কয়েকজনকে সাথে নিয়ে অবৈধভাবে ধলেশ্বরী ও এলোংজানী নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এ বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ার কারনে এলাকাবাসী বার বার বাঁধা দেওয়ার চেষ্ঠা করলেও এখনো বন্ধ হয়নি বালু মহল গুলো। এলাকার কেউ এ বিষয়ে কথা বললে তাকেও বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো হয়। ফলে এলাকাবাসী কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। প্রতিবছর বন্যায় প্রায় দেড় থেকে দুইশতাধিক পরিবার গৃহ ছাড়া হয়ে পড়ে। এছাড়াও মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও হাজার হাজার ফসলি জমি বিলীন হয়ে যায়। এদিকে প্রশাসন বার বার অবৈধভাবে নদী থেকে ড্রেজার ধ্বংস করলেও পুনরায় চালু হচ্ছে ওইসব বালুর ঘাট।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীতে এখনো চলছে বালু উত্তোলন। কিছু দিন আগেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ৭টি বাংলা ড্রেজার ধ্বংস করলেও আবারো চলছে বালু উত্তোলনের কাজ। অপরদিকে সদর উপজেলার সেলিমপুর ইউনিয়নের এলোংজানি নদীর উপর চলছে প্রভাবশালী মহলের একটি ড্রেজার। এলাকাবাসী জানায় নুরু মিয়া ও উজ্জল মিয়া এ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। তারপাশেই দেলদুয়ার উপজেলার দেউলি ইউনিয়নের মাইঠান এলাকার জাহাঙ্গীর মাতব্বরের আরেকটি ড্রেজার। অপরদিকে দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটী ইউনিয়নের শাহধারীপাড়ার এলোংজানি নদীতে চলছে দুটি ড্রেজার। আর এসব জায়গা থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু বিক্রি করছে বালু খেকোরা।
অন্যদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। তারওপর ড্রেজার দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। যেকোন সময় দেখা দিতে পারে ব্যাপক ভাঙ্গন। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
এলাকাবাসী বলেন, আমরা প্রভাবশালীদের কাছে জিম্মি। আমরা কোন প্রতিবাদ করতে পারি না। যেভাবে ড্রেজার চালানো হচ্ছে তাতে মনে হয় এবছর আর বাড়ি-ঘর থাকবো না। প্রশাসনের কাছে বার বার বলার পরেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয় না। পুলিশ আসে একদিন বন্ধ থাকে তারপর আবার চালু হয়।
ড্রেজার শ্রমিকরা বলেন, ড্রেজার বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিলো। পরে ড্রেজার মালিকের নির্দেশে গত এক মাস ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর নদীর পানি বাড়তাছে কিছুদিন পর তো আর বালু তোলা যাবো না।
আসু মিয়া, ফজর মোল্লা, সিদ্দিক ও আমিনুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ নদীতে বালু উত্তোলন করছে এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকজন। আর আমরা গরীব মানুষ আমরা কিছু বলতে পারি না। এলাকার মানুষ তাদের দেখে ভয় পায়। আর এ ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারনে আমাদের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। গত বছর বন্যায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবছরও আবার নদীতে পানি আসতে শুরু করেছে। এখভনও যদি ড্রেজার বন্ধ না করা যায় তাহলে আমাদের রাস্থায় গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে। আমরা চাই সরকার এই ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
ড্রেজার মালিক নুরু মিয়া বলেন, আমি সরকারি কাজে বালু উত্তোলন করছি। তবে আমার কাছে কোন লিখিত কাগজ নেই। এ বিষয়ে কিছু করার দরকার নেই। আমি আপনার সাথে দেখা করবো।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত জাহান বলেন, নদী থেকে যারা অভৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আমি খবর পাওয়া মাত্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই। ইতিমধ্যে টাঙ্গাইল সদরের বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার ধ্বংস, ড্রেজার মালিকদের শাস্তি ও জরিমানা করেছি। যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন সুমী’র সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।