বাসাইলে গ্রাহকদের কোটি টাকা নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি উধাও

0
125

বাসাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের বাসাইলে ‘ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং’ বুথের এজেন্ট ছাত্রলীগ সভাপতি সারোয়ার হোসেন সবুজ গ্রাহকদের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সারোয়ার হোসেন সবুজ উপজেলার ফুলকী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও আইসড়া গ্রামের মারিফত মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় ২৪ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরতের দাবিতে উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের আইসড়া বাজারে অবস্থিত আইসড়া ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং বুথের সামনে অবস্থান নেয়।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন বছর আগে ডাচ্-বাংলা কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইসড়া বাজারে এজেন্ট ব্যাংকিং বুথ চালু করে। উপজেলার ফুলকী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সবুজ এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। বাজারে ঘর ভাড়া নিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করেন। ব্যাংকিং নীতিমালা উপেক্ষা করে সাধারণ রেটের চেয়ে উচ্চ হারের রেটের প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে গ্রাহকদের উৎসাহিত করেন। অতি মুনাফার আশায় গ্রামের মানুষ বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা ও বাজারের ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন। এরপর জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন তাদের জমানো টাকা ব্যাংক হিসেবে নেই। এজেন্ট সবুজের কাছে টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সে বিভিন্ন গ্রাহকের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তালবাহানা শুরু করেন। টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। তাদের জমানো টাকা পাওয়ার আশায় বাজারে সালিশী বৈঠকে বসা হয়। সেখানে সবুজ টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। হঠাৎ করে সম্প্রতি সবুজ ব্যাংক বন্ধ করে পালিয়ে যান।

ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ- গ্রাহক রুম্পা বেগমের ১৪ লাখ টাকা, আফজাল হোসেনের ৯ লাখ টাকা, রাজুর ৭ লাখ টাকা, জলি বেগমের পৌঁনে ৪ লাখ টাকা, বাজারের চা বিক্রেতা আবুল হোসেনের ১ লাখ টাকা, ইতি খানের ৪০ হাজার টাকাসহ অসংখ্য গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে এজেন্ট ছাত্রলীগ নেতা সবুজ।

ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহক ও ব্যবসায়ী রাজু বলেন, ‘আমি পাঁচ লাখ জমা দিয়ে প্রতারিত হয়েছি। ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংক টাঙ্গাইল অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-এর পেছনে জড়িত রয়েছে। তা নাহলে সবুজ এই কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সাহস পেতো না।’

ইতি খান নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করে ব্যাংকে টাকা রেখেছি। সে এমন প্রতারণা করবে বুঝতে পারিনি। প্রথম যখন টাকা জমা রাখি তখন মোবাইলে এসএমএস আসতো। পরবর্তীতে ব্যাংকে টাকা জমা দিলে এসএমএস আসতো না। এ বিষয়ে তাদের জানালে তারা বলতো সার্ভার নষ্ট হয়েছে।’

ফুলকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গত তিন দিন আগে আইসড়া বাজারের সকল গ্রাহক, ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষ, বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং এজেন্ট সবুজের বাবাকে নিয়ে সালিশী বৈঠকে বসা হয়। সবুজের বাবা তার সম্পতি বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধে রাজি হন। সকলের উপস্থিতিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হিসাবের ভিত্তিতে টাকা পরিশোধ করা হবে বলেও জানান তিনি।’

অভিযুক্ত সারোয়ার হোসেন সবুজের বোন সাথী আক্তার বলেন, ‘প্রায় চার বছর আগে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকিং-এর শাখা আনা হয়। আমার ভাই অফিসে নিয়মিত বসতো না। আমার মামী হাবিবা সিকদার অফিস পরিচালনা করতেন। তার সাথে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। অফিসে কোনও সমস্যা হচ্ছে এমন কিছু মামী আমাদের কখনও বলেনি। আর এখানে নিয়মিত অডিটও হতো না। আজ যে সমস্যা হয়েছে এটার জন্য আমার ভাই একা দায়ী নয়। এখানে টাঙ্গাইল অফিসের লোক, আমার মামী হাবিবা সিকদার ও ফারুক নামের আরও একজন জড়িত থাকতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। সমাজে আমাদের একটা মর্যাদা রয়েছে। বিষয়টি বাজার কমিটির মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। উপযুক্ত প্রমান দিতে পারলে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’

উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কামরান খান বিপুল বলেন, ‘ফুলকী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন সবুজের বিরুদ্ধে গ্রাহকের টাকার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় ইতোমধ্যেই জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের নিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৫জনু) এবিষয়ে রেজুলেশন করা হবে।’

টাঙ্গাইল ডাচবাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং অফিসের ব্যবস্থাপক আব্দুর রউফ বলেন, ‘এঘটনা নিয়ে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একটি মিটিং করেছে। স্থানীয় পর্যায়ের লোকজনকে সাথে নিয়ে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

 

 

 

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।