সোমবার, অক্টোবর ২, ২০২৩
Homeটাঙ্গাইল জেলাবাসাইল পৌরসভা নির্বাচন: আ.লীগের নৌকা ঠেকাতে মরিয়া দুই মেয়র প্রার্থী

বাসাইল পৌরসভা নির্বাচন: আ.লীগের নৌকা ঠেকাতে মরিয়া দুই মেয়র প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২১ জুন টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা জমে ওঠছে। ভোটারদের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গায় চলছে নির্বাচনী আলোচনা। ভোটাররা করছেন নানা বিশ্লেষণ। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান মেয়রসহ তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিন মেয়র প্রার্থীই জনপ্রিয় ও হেভিওয়েট হওয়ায় নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হবে।

এছাড়া ইতোমধ্যে তিন মেয়র প্রার্থীই স্ব-স্ব নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থণা করছেন। তাদের কর্মী-সমর্থকরাও ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পাড়া-মহল্লা বেছে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

মেয়র পদের প্রার্থীরা হচ্ছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদ, বাসাইল উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত সভাপতি এনামুল করিম অটল এবং উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি রাহাত হাসান টিপু।

উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮ হাজার ৪৩৭ জন ভোটারের এ পৌরসভায় তিন জন মেয়র প্রার্থী, নয়টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আগামী ২১ জুন এ পৌরসভার ১০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে।

এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রহিম আহমেদের সামনে সমস্যার পাহাড় হয়ে আবির্ভুত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত সভাপতি এনামুল করিম অটল এবং উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি রাহাত হাসান টিপু।

স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রহিম আহমেদ স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) অনুসারী। উপজেলা আওয়ামী লীগে তীব্র অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিদ্যমান। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী অলিদ ইসলামের নেতৃত্বে দলের একটি বড় অংশ সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) বিরুদ্ধে সোচ্চার। অভ্যন্তরীণ এই কোন্দলের প্রভাব নির্বাচনে পড়লে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর জন্য কাল হয়ে দেখা দিতে পারে।

এদিকে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এনামুল করিম অটলকে গত শুক্রবার (৯ জুন) বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। তবুও তিনি অনুসারীদের নিয়ে নির্বাচনের মাঠে সক্রিয়। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নির্বাচনী এলাকা বাসাইল। তাই তিনিসহ দলের শীর্ষ নেতারা তাদের মনোনীত প্রার্থী রাহাত হাসান টিপুকে বিজয়ী করতে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।

২০১৩ সালের প্রথম ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পৌরসভা নির্বাচনে এনামুল করিম অটল এবং রাহাত হাসান টিপু নিজ নিজ দলের প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করেন। উভয়েই সামান্য ভোটে পরাজিত হন। এবার জয়ের জন্য উভয়েই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চান। এখনও পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য কোথাও চাপ সৃষ্টি করা হয়নি। তারা ভোট দিতে পারলে সৎ, যোগ্য ও সব সময় কাছে পাওয়া যাবে এমন প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবেন।

উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত সভাপতি এনামুল করিম অটল জানান, এ বহিস্কারাদেশ নির্বাচনে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না। দলের পদধারী নেতারা প্রকাশ্যে তার পক্ষে নির্বাচনী কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন না ঠিকই কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার পক্ষে কাজ করছেন। উপজেলা বিএনপির সবাই তার সঙ্গে আছেন।

তিনি আরও জানান, গত পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তিনি অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। সেই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার নির্বাচন পরিচালনা করছেন। এবার ৭০ ভাগ ভোটার তার পক্ষে রয়েছেন। এবার তিনি নির্বাচিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের উপজেলা শাখার সভাপতি রাহাত হাসান টিপু জানান, পৌরসভার গত দুইটি নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে তিনি হেরে ছিলেন। পরাজিত হলেও তিনি নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে যান নি। তিনি ১০ বছর ধরে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। সাধারণ মানুষের সুখে-দু:খে ভাগিদার হয়েছেন। বাসাইলের জনগণ তাকে চায়। বিজয়ের বিষয়ে তিনি শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলে তার বিজয় নিশ্চিত।

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদ জানান, নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কোন প্রভাব পড়বে না। গত পাঁচ বছর পৌরসভায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ তিনি করেছেন। তাই দলের সব স্তরের নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটাররা তার সঙ্গে আছেন। তারা ঐক্যবদ্ধ আছেন। জয়ের বিষয়ে তিনি আশাবাদী।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনি শংকর রায় জানান, আগামী ২১ জুন বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহন করা হবে। এ পৌরসভায় মেয়র তিন জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি জানান, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে যা যা করা প্রয়োজন তার সবই করা হচ্ছে।

২০১১ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। সে নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন মজিবুর রহমান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রহিম আহমেদ মেয়র নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম আহমেদ এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে তার সামনে এবারের নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হওয়া সহজ হবে না।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -