প্রাইমারি স্কুলের ক্লাস রুমের সামনে তালা ধরে আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা। কে আগে ঢুকবে তার জন্য প্রায়ই তর্ক বাঁধা। একজন আরেকজনকে হাত ধরে আটকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা। অবশেষে ক্লাসে ঢুকে সামনের বে টিতে বইগুলো ভাগ করে ছড়িয়ে সেই তোদের জন্যই জায়গা রাখা। আমার তো মনে পরে সেই সব পুরনো দিনের কথা। তোরা কি ভুলে গেছিস নাকি আজও আমার মতো মনে পড়ে সবার কথা।
স্যারের ওজুর পানি কে আগে এনে দিবে এ নিয়ে প্রায়ই দৌড়ে টিউবওয়েলের কাছে যেতে হোঁচট খাওয়া। তোরা ক্লাসে না এলে চুপ করে পিছনের বেে বসে তোদের নামে মৃদস্বরে উপস্থিত বলে দেওয়া। টেবিলের এপার চেয়াওে বসে ওপারে থাকা আমাদের কান ধরে বিজ্ঞান স্যারের আলতো চর খাওয়ার ভয়ে পেট ব্যাথার কথা বলে স্কুল কামাই করা। ভুলে কি গেছিস বন্ধু। নাকি আমার মতো মনে পরে আজও সেইসব পুরনো কথা।
পাঁচ ক্লাস পড়ে শেষ পরীক্ষার আগে মাজারের মানত ছিল। সবাই বাতাসা কিনে সারি সারি বসে খোদার দরবারে পরীক্ষা ভালো হওয়ার জন্য কতোই না ফরিয়াদ জানলাম। সেই সারিই শেষ একসাথে হওয়া। কেও চলে গেল গার্লস স্কুলে। কেউবা শহরের স্কুলে। ভুলে কি গেছ বন্ধু সেইসব কথা?
হাই স্কুলে গিয়ে বন্ধুত্বেও নতুন খাতায় যোগ হলো অচেনা আরও কতো বন্ধু। তাই বলে কি মুছে গিয়েছিল জীবনের সেই প্রথম বন্ধুত্ব। স্কুলে যাওয়া। খেতে দেরি হওয়ায় মাদুরের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তোদেরকে নিয়ে যাওয়া। আবার এক সাইকেলে তিনজন করে অতি কষ্টে একসাথে চলে আসা। ফুটবল খেলার মাঠে দুটাকারর বাদাম কিনে কে কয়টা খাবে প্রতিযোগিতা করা। এক টাকার একটি আখ কিনে আখের মাথার অংশ কে নিবে এ নিয়ে হিংসে করা। আবার সেই বন্ধুত্বেও টানে অগ্রভাগের জন্যই সবাই কাড়াকাড়ি করা। ভুলে কি গেছিস বন্ধু সেই সব পুরনো দিনের কথা?
সামাজিক বলো বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শিরনির জন্য বাড়ি বাড়ি চাউল তোলা। বানের পানিতে গোশলে নেমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভেজা। ঘোলা পানিতে গোশল করে শরীরটা মাটির আবরণে ঢেকে মায়েদের বকুনি খাওয়া।
মোবাইল ছিলনা বলে মিস্ডকলের পরিবর্তে তিনটি হাত তালির সংকেত দিয়ে খেলার মাঠে যেতে বাড়ি থেকে বের করা। রাত নেই দিন নেই পুরটা সময় একসাথে থাকার যে আগ্রহ। অনেকটা রাত এক চাদরের ভেতর সবাই মিলে বসে খোলা আকাশের নিচে জীবনের গল্প বলা। আগাম স্বপ্নতো তখনি ভেবেছিলাম সবাই। নিজের জন্য কারও কোন স্বপ্ন ছিল না। ছিল একে অপরের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার প্রতিযোগিতা। ভুলে কি গেছিস বন্ধু সেই সব প্রতিজ্ঞার কথা ?
কলেজে সেই শ্লোগান ভুলে কি গেছিস বন্ধু। রাজনৈতিক দলের ছাত্র কর্মীগুলো ক্লাসের সামনে এসে শ্লোগান দিয়ে আমাওদের বের করে নিয়ে যেত ওদের মিছিলে। মাঝে মাঝে বিরক্ত হলেও আনন্দটা কিন্তু কম ছিলো না?
অনেকটা সময় পেরিয়ে আজ আমরা সবাই নিজনিজ কর্মস্থলে। কেউ বিমানে করে প্রবাসে গিয়ে কাজের চাপে ভুলে আছো মোরে। কেউ বা দেশেই আছো । বসের চাপে আটকে আছো চার দেয়ালের মাঝে। কেউবা টাকার গন্ধে দুচোখ অন্ধে আমাদের খুঁজে পাচ্ছ না। তবুও বলি ভাই। এতো ব্যস্ততার মাঝেও তোদের সাথে সেই পুরনো সঙ্গটা চাই।
পুরনো কথা মনে পড়ে কিনা জানিনারে ভাই। তবুও বলি ভালো থাকিস বন্ধু। ব্যস্ততার মাঝে যেভাবে মোওে ভুলে আছিস তোরা দুর-দরান্তে তেমনি করে কোন মোহে পড়ে অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিসনে ভাই। তোদের ভাবনাটা হোক দেশের জন্য। কল্যাণের জন্য। আগের প্রতিজ্ঞার মতো অন্তত এখন প্রত্যাশা করে যাই।
১৯১৯ বলো, ১৯৩৫ বলো। আগস্টের প্রথম রবিবার বন্ধু দিবস পালন করে আসছে পুরো বিশ^। আজ সেই আগস্টের প্রথম রবিবার। সবাই পালন করবে বন্ধু দিবস। আসলে কি বন্ধু দিবসের প্রয়োজন আছে? নেই। কারন বন্ধুত্ব হয় মনের মিল থেকে। প্রতিটি মুহুর্তই বন্ধুত্বের অনুভুতি থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বন্ধুত্বের প্রতি ১২ জনে একজন টিকে থাকে। গবেষকদের জন্য কি বাকি ১১জন বন্ধুকে ভুলে থাকতে পারি? গবেষকরা বলেন, বন্ধুরা কাছাকাছি থাকলে মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং তা রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। চল না আবার ব্যস্ত পৃথিবীতে নিজেদের জন্য হলেও আবার বন্ধুদের মাঝে একটু সময় দেই। জানিস তো, শিশুরা হাঁটা ও কথা বলা শেখার আগেই বন্ধুত্বের অনুভূতিটা টের পেতে থাকে। কেউ কেউ বলে বন্ধুদের মাঝে নাকি ‘জিনগত মিল’ পাওয়া গেছে।
তবে বিশ্ব গ্রামে আজকাল এমন বন্ধুর সংখ্যা খুব বেশি নেই। কোনো কিছু পাওয়া যেমন কঠিন, তেমনি কাছে রাখার গুণটাও জরুরি। মনে রাখতে হবে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিচর্যার কোনো বিকল্প নেই। এক পাক্ষিক কোনো কিছুই মজবুত হয় না। অবহেলা যে কোনো সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে রিয়েল বন্ধুর পরিবর্তে ঝুঁকছি কৃতিম বন্ধুর দিকে। ঘনিষ্ট বন্ধুকে সময় না দিয়ে ফেসবুক বন্ধুদের নিয়ে মেতে আছি। পাঁচ হাজার এফবি বন্ধু। হাজার হাজার ফলোয়ার্স অথচ বিপদ মুহর্তে সেই শৈশবের প্রিয় বন্ধুটিই পাশে থাকে। পৃথিবীর সব মানুষের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক। সবার বন্ধুরা ভালো থাকুক। তোরাও ভালো থাকিস।
- তোমাদের বন্ধু রেজাউল করিম
- সংবাদকর্মী ও
পরিচালক ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার