নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন বছর আগে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে আটকের পর গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
তিনি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে এবং একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ভাই।
শুক্রবার (০১ নভেম্বর) বিকালে ওই তাকে আদালতে তোলা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসমত আরা আগামী ৩ নভেম্বর রবিবার রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন। পরে মুক্তিকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরআগে গত ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে বিকালে আদালত এলাকা থেকে সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে আটক করে পুলিশ।
জানা গেছে, সহিদুর রহমান খান মুক্তি আদালতে হাজিরা শেষে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে হুইল চেয়ারে করে আদালত কক্ষ থেকে বের হন। এ সময় তিনি ও তার সঙ্গে থাকা সহযোগীরা আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পায়। এর আগেই পুলিশ সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে বহন করে আনা অ্যাম্বুলেন্সটি আদালতের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। পরে সহিদুর আবার আদালত কক্ষে ফিরে যান।
এরপর বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি আবার হুইল চেয়ারে করে আদালত কক্ষ থেকে বের হন। আদালত চত্বর থেকে বাইরে আসার পর টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তানভীর আহম্মেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে।
এ সময় ওসি সহিদুর রহমান মুক্তিকে পুলিশের আনা একটি কালো মাইক্রোবাসে উঠতে বলেন। তখন সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানভীর আহম্মেদকে জিজ্ঞেস করেন- ‘আপনি কি আমাকে গ্রেফতার করছেন? আপনি কি আমাকে গ্রেফতার করছেন?’ জবাবে ওসি তানভীর আহম্মেদ তাকে আটকের কথা বলেন। তাকে কোন মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে তা জিজ্ঞাসা করেন।
এ সময় ওসি তানভীর বলেন- আমাদের সঙ্গে চলেন, সব জানানো হবে। পরে বিকাল পৌনে ৪ টার দিকে আটক করে তাকে টাঙ্গাইল সদর থানায় নেওয়া হয়।
আদালত সূত্র জানায়, ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় সহিদুর রহমান খান মুক্তি গত গত ২২ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে স্থায়ী জামিন লাভ করেন। পরে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার মামলার ধার্য তারিখে তিনি অ্যাম্বুলেন্সযোগে আদালতে আসেন।
আটকের সময় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি-দক্ষিণ) অফিসার ইনচার্জ মীর মোশারফ হোসেন, গোয়েন্দা শাখার (ডিবি-উত্তর) অফিসার ইনচার্জ এবিএমএস দোহা সহ গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তানভীর আহম্মেদ জানান, আটকের পর টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিপি নূরের উপর হামলার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা শেষে শুক্রবার (১ নভেম্বর) ৭ দিনের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) আবেদন করে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু জানান, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির নামে বিভিন্ন ধরণের মামলা রয়েছে। সে কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সবকিছু জানানো হবে।
২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিপি নুরুল হক নুরের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। প্রায় ৩ বছর পর ওই ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান বাদী হয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা করলে ২ সেপ্টেম্বচর রাতে তালিকাভুক্ত বা এফআইআর হিসেবে গণ্য করা হয়। এই মামলায় সাবেক মেয়র মুক্তিকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
উল্লেখ্য- ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় মুক্তির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এরপর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘদিন পর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। পরে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জামিন পেলেও পরে সেই জামিন বাতিল করেন আদালত।
এরপর ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে ২২ নভেম্বর কারামুক্ত হন তিনি। পরে আদালত তার জামিন বাতিল করলে পরদিনই আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যান। গত ২৮ আগস্ট তিনি আবার জামিন পান।
আদালত সূত্র জানায়, ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় মুক্তি গত ২২ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে স্থায়ী জামিন লাভ করেন। পরে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মামলার ধার্য তারিখে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে করে আদালতে আসেন।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।