নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: জয়গন বেওয়া। বয়স ৭০ হয়েছে। স্বামী মারা গেছেন বহু বছর আগে। একমাত্র ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি নাতনি নিয়ে রেললাইনের পাশে বসবাস করছেন তিনি।
হঠাৎ বন্যার পানিতে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক ভেঙে মুহূর্তে ঘরে পানি প্রবেশ করে। এতে অসহায় হয়ে পড়েন বৃদ্ধা জয়গন বেওয়া। পানিতে ঘর তলিয়ে যাওয়ায় আশ্রয় নেন ভূঞাপুর-জামালপুর রেললাইনের ওপর। ফলে সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাকে। গত বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলার টেপিবাড়িতে রেললাইনের ওপর বসবাস শুরু করেছেন তিনি। সপ্তাহখানে ধরে রেললাইনের ওপর বসবাস করলেও কোন ধরনের ত্রাণ সহায়তা পায়নি পরিবারটি।
জয়গনের মতো আরেকজন হলেন শহর আলী (৬০)। পেশায় ভ্যানচালক। সংসারে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এরমধ্যে শাহদত (৯) নামের এক ছেলে প্রতিবন্ধী। কোনরকমে ভ্যান চালিয়ে সংসার চলছে তার। অসহায় ওই শহর আলীর বাড়িতেও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে ঘর তলিয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে রেললাইনের উপর আশ্রয় নিয়েছেন তিনিও। ভূঞাপুরে প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া শুকনা খাবার পেয়েছেন তিনি। কিন্ত সে খাবার দুইদিনে শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিনে এক বেলা খেয়ে টেপিবাড়ি এলাকার রেললাইনের ওপর খুপড়ি ঘর তুলে মানবেতর দিনযাপন করছেন।
এছাড়া উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের চরগাবসারা দাখিল মাদরাসায় ১০দিন ধরে আশ্রয় নেওয়া নুর হোসেন (৮২) এখন পর্যন্ত কোন ধরনের ত্রাণ সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব-জামালপুর রেললাইনের ভূঞাপুর পৌরসভার টেপিবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জয়গন বেওয়া, শহর আলীসহ অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন অর্ধশত পরিবার। উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প কেন্দ্র ও চর গাবসারা দাখিল মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, কুকাদাইর ও খানুরবাড়ি লোকজন উচু সড়কে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির স্রোতে ভেঙে গেছে, তারাকান্দি-ভূঞাপুর সড়ক, ভূঞাপুর-এলেঙ্গা সড়ক, তারাই-গারাবাড়ি সড়ক, টেপিবাড়ি-ফলদা সড়ক, গোবিন্দাসী-ভালকুটিয়া সড়ক। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। যদিও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক মেরামতের কাজ চলছে।
অন্যদিকে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে যমুনা নদীর পানি কমে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমায় রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রশাসন থেকে ত্রাণ সহায়তা যা বিতরণ করা হচ্ছে সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছে বানভাসিরা।
টেপিবাড়ি গ্রামের জয়গন বেওয়া বলেন, পাচঁদিন ধরে রেললাইনের ওপর দিন কাটাচ্ছি কিন্তু কেউ খোঁজ নেয়নি। এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা পাইনি। যেদিন মন্ত্রীরা আসছিল সেদিন গেছিলাম কিন্তু পাইনি।
চরগাবসারা দাখিল মাদরাসায় আশ্রয় নেয়া নুর হোসেন বলেন, গত ১০দিন ধরে এইখানে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু কেউ এখনও দেখতে আসলো না। খুবই কষ্ট হচ্ছে এখানে। গরু-ছাগল নিয়ে আরো কষ্টে আছি।
গাবসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এই ইউনিয়নে যারা বেশি ঝুঁকি ও পানিবন্দি ছিল তাদের মাঝে ২০ মেট্রিকটন চাল ও ৫শ শুকনা খাবার বিতরণ করেছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে আরো চাল দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এই ইউনিয়নে ১০ হাজার পরিবারের তালিকা পাঠিয়েছি। যারা এখনও ত্রাণ সহায়তা পায়নি তারা পর্যায়ক্রমে পাবেন।
উপজেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৩৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এরমধ্যে ১৫ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৯শ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ জানান, পানিবন্দিদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা মজুদ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো বিতরণ করা হবে। উপজেলায় ত্রাণ বিতরণের জন্য ৮টি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌছে দিয়ে আসবে। বর্ন্যাতদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের জন্য ৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বন্যাদূর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।