নিউজ ডেস্ক: পৃথিবীর প্রত্যেকটা ভালোবাসা কোন না কোন ভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থের সাথে জড়িত। হোক সে ভালোবাসা মা-বাবা, ভাই-বোন, একটি ছেলের সাথে একটি মেয়ের। তবে ভালোবাসা বা প্রেম যত ভাবেই বিশ্লেষণ করেন, তার সাথে স্বার্থ জড়িত থাকে।
সে যাই হোক, এখন মুল ঘটনায় আসি। ঘটনাটি আমার সাথে ঘটেনি। তবে ঘটনার সাথে আমি জড়িত। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা। আমার এক আপন ফুফাত বোন নাম শিলা। জন্মের সময় তার মা মারা যায়। তার বয়স যখন ১০ কি ১১ বছর তখন তার বাবাও মারা যায়।
তারপর প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর আমাদের বাড়িতেই থাকত। তার কিছুদিন পর আমার আরেক ফুফু তাকে ঢাকায় নিয়ে একটি গার্মেন্টসে চাকরি ব্যবস্থা করে দেয়া। প্রায় ৮ থেকে দশ বছর বা তারও বেশি ঢাকায় চাকরি করে।
দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ বছর চাকরি করার পর পরিবারের সকলের সম্মতিক্রমে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে নয়ন মিয়া নামে এক ছেলের সাথে শিলার বিয়ে হয়। তবে প্রেম/ভালোবাসা করে নয়। তারপর সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বামীর বাড়িতে বেশ সুখেই দিন চলছিল তাদের।
কিন্তু বিয়ের তিন মাস পর আমার ছোট ভাই মোটরসাইকেলে করে তাকে শ্বশুর বাড়ি (ঈশ্বরগঞ্জ) থেকে আমাদের আনতে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে মোটরসাইকেলের পিছন থেকে পড়ে গিয়ে মাথার বাম সাইটের হাড় ভেঙ্গে মস্তিস্কে হাড় ঢুকে যায়।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় সেখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে ভর্তি করে মাথার সিটিস্ক্যান করার পর শিলার অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকার এক বড় হাসপাতালে রেফার্ড করে।
পরে ওই দিনই আমার পকেটে নগদ ৫১ হাজার টাকা নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
সাথে করে নিলাম আরও চার জন মহিলা ও শিলার স্বামীসহ দুইজন পুরুষ। এত মানুষ সাথে করে নেয়ার কারণ হচ্ছে, কম করে হলেও শিলা চারজন চেপে ধরে রাখতে হয়। না হলে তাকে ঠিক রাখা যায় না।
ওই দিন রাত প্রায় আড়াইটার দিকে ঢাকার ওই হাসপাতালে ভর্তি করি। ওইদিন রাতেই ঘুমের ইনজেকশন দেয়। কিন্তু ঘুমের ইনজেকশন দেয়ার পরও চারজন ধরে তাকে বিছানায় চেপে ধরে রাখতে হতো।
পরদিন সকাল থেকেই শুরু হলো মূল কাহিনী। নোয়াখালীর একটা মেয়ে নাম সুমি, দেখতে খুব সুন্দর। সুমির মায়ের সমস্যা ছিল ব্রেইন টিউমার। আরেকটা মেয়ে ছিল তার নাম মনে নেই। তবে তার বাড়ি ছিল সিরাজগঞ্জ।
আমাদের সিট পরে ওয়ার্ডের বারান্দার এক কোনায়। ওয়ার্ডে রোগীর অনেক চাপ থাকায় বারান্দার পুরোটা জুড়েই ছিল রোগীদের বেড। আমার রোগী শিলার জন্য বারবার ঔষধ আনার জন্য বাইরে যেতে হত।
প্রত্যেকবার বের হওয়ার সুমি তাদের সিটে বসে পা সামনের দিকে দিয়ে রাখত। আমি যেন যেতে না পারি। বারবার সে এমন করত। পরে আমি বাধ্য হয়েই ওয়ার্ডের ভিতর দিয়ে বাইরে বের হতাম। এভাবেই কাটল তিনদিন।
পরে আমি সুমিকে জিজ্ঞাসা করলাম আমার সাথে এমন করার কারণ কি? সে জানান, এমন করতে ভাল লাগে, তাই করি। এখান থেকেই শুরু হয় কথা বলা। তারপর থেকেই নিয়মিত কথা হত সুমির সাথে। তবে সুমির কোন মোবাইল ছিল না। সিরাজগঞ্জের মেয়েটির ১১শ মডেলের একটি নকিয়া মোবাইল ছিল।
তারপর সুমির সাথে শুরু হয় টাকার লেনদেন। সুমি আমার কাছ থেকে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা নেয়। তার মায়ের চিকিৎসার জন্য। বলছে বাড়ি থেকে লোক আসলে দিয়ে দিবে।
এভাবে কেটে গেল ১১ দিন। তার বাড়ির লোক আর আসল না। আমার টাকাও ফেরত নেয়া হলো না। ছুটি হয়ে গেল আমার রোগীর, আমরা চলে আসব। তবে সুমি মেয়েটাকে আমার ভাল লেগে যায়। আমরা ছুটি নিয়ে চলে আসার সময় সুমি অনেক কান্নাকাটি করে।
পরে আমার বাম হাতের বাহুতে (কনুইয়ের উপরে) একটা চিকন সোনার নেকলেস ব্যবহার করতাম। এটা আমার স্মৃতি হিসাবে তোমাকে দিয়ে গেলাম।
তোমার মায়ের অপারেশন কবে হবে আমাকে জানাবে, আমি আসব। তারপর হাসপাতাল থেকে আমরা বিদায় নিলাম।
ঢাকার উত্তরায় ফুপুর বাসায় দুইদিন থাকার সময় নিয়মিত সিরাজগঞ্জের মেয়ের মোবাইলে সুমির সাথে আমার কথা হয়েছে। তারপর বাড়িতে আসার একদিন পর থেকে সুমির সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই।
ফোন করলাম সিরাজগঞ্জের মেয়ের ফোন নাম্বারে সে বলল, আজ রাতে সুমির মায়ের ব্রেইন টিউমারের অপারেশন হবে। এজন্য হয়তো কথা বলে না। ঠিক আছে, এটা কোন ব্যাপার না।
অপারেশনের পরদিন সিরাজগঞ্জের মেয়ে আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে। সুমি কি আপনার কাছে চলে গেছে। আমি বললাম তার মানে কি, সে জানাল সুমির মায়ের অপারেশনের পর থেকে সুমিকে পাওয়া যাচ্ছে না।
এই জন্যই আপনার কাছে জানতে চাইলাম। সুমি আপনার ওখানে চলে গেছে নাকি? আমি বলছি, না। আমার কাছে তো আসেনি।
একদিন পর সিরাজগঞ্জের মেয়ে আমাকে ফোনে জানাল, সুমির মায়ের অপারেশন চলাকালীন সময়েই সুমি অন্য আরেক রোগীর ছেলের হাত ধরে চলে গেছে।
এই কথা জানাজানি হওয়ার পর লজ্জায় সুমির স্বজনরা, অপারেশন করার পর দিন সকালে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
কিন্তু সুমির দুলাভাইয়ের ফোন নাম্বার ছিল আমার কাছে। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, ওই একই ওয়ার্ডে আরেকটি ছেলে ছিল তার নাম মনে নেই। তার হাত ধরে সুমি তার মায়ের চিন্তা না করে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।
ওই ছেলের বাড়ি ছিল ঢাকার নবাবপুরে। সে রড মিস্ত্রীর কাজ করত। তারপর নবাবপুরে ওই ছেলের বন্ধুর ফোন নাম্বার সংগ্রহ করি। ওই ছেলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু, ওই ছেলের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তারপর সুমির মায়ের সাথে কথা বলছি অনেকবার সুমির দুলাভইয়ের নাম্বারে। প্রায় তিনমাস পর সুমির মা মারা যায়। পরে আর তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।