‘নচিকেতা মানে জীবনের বেঁচে থাকার গান। লড়াইটা চালিয়ে যাও দাদা। আছি তোমার সঙ্গে।’ কিংবা ‘নচিকেতা মানে বেঁচে থাকার গান।’ এমন অনেক আশাজাগানিয়া কথা জমা পড়ছে মন্তব্যের ঘরে, ইউটিউবে।
মন্তব্যগুলোর ঠিক উপরে নচিকেতার কয়েকটি জলছবি খেলা করছে। ক্লিক করতেই তিনি দরাজ কিংবা দরদী কণ্ঠে গেয়ে উঠছেন- মন ভরে দেখেছি আকাশ/ শেষ কবে কিছু মনে নেই/ আজ এতদিন পরে বুঝি বনের পাখিটা বনে নেই/ এভাবে কতদিন যাবে/ কী করে বাঁচতে হয় তুমি কি শেখাবে…
বহুদিন নচিকেতার অ্যালবাম দূরে থাক নতুন কোনও গানই প্রকাশ পচ্ছিল না। অনেকটা ভক্তদের চমকে দিয়ে গেল ২৩ জুন ভারতের আশা অডিও থেকে প্রকাশ পেয়েছে তার নতুন অ্যালবাম। নাম তার ‘বেঁচে থাকার মানে’।
ডিজিট্যাল সময়, তাই ফিজিক্যাল অ্যালবাম ছাপিয়ে গানগুলো এখন ভাইরাল হতে চললো ইউটিউব হয়ে ফেসবুকে। সমালোচকরা বলছেন, ফেলে আসা খুব চেনা নচিকেতাকে এবার নতুন করে চেনার সুযোগ তৈরি হলো অ্যালবামটি দিয়ে।
টানা ৮ বছরের অভিমান ভেঙে নচিকেতার সর্বশেষ একক অ্যালবাম এসেছিল বছর দুই আগে। বরাবরের মতো নিজের কথা-সুরে বাঁধা ঐ অ্যালবামের নামটি ছিল ‘আয় ডেকে যায়’।
না, এবার আর নতুন এককের জন্য অতোটা সময় নেননি দুই বাংলার অসম্ভব জনপ্রিয় বিষয়ভিত্তিক গানের এই শিল্পী। বরং দুই বছর ব্যাবধানে প্রকাশিত এবারের এককে তিনি চমকে দিয়েছেন দুই বাংলাকেই।
কারণ, এবারই প্রথম তিনি অন্য কোনও গীতিকবির লেখা গানে পুরো অ্যালবাম সাজিয়েছেন নিজের কণ্ঠ-সুরে। এবং সেই গীতিকবি কলকাতার কেউ নন, গানগুলো লিখেছেন বাংলাদেশের জুলফিকার রাসেল।
কিন্তু কেন এবার নচিকেতা অন্যের কথায় পুরো অ্যালবাম গাইলেন! তাও আবার বাংলাদেশের গীতিকবিতায়- এমন প্রশ্নের জবাব নচিকেতা আগেও দিয়েছেন, বলেছেন এবারও। তার ভাষায়, ‘দেখুন আমি একটা বিষয় লক্ষ করেছি- ঢাকায় খুব বেশি গান লেখার মানুষ নেই। আমি অন্তত খুঁজে পাইনি। যে দু’একজন আছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম জুলফিকার রাসেল। তার আসলে গানটা লেখা হয় কিংবা আমি যা চাই তা তার লেখায় সেটা খুঁজে পাই। সেজন্যই গেল ক’বছর ধরে আমরা নিয়মিত গান করে আসছি নিজেদের খেয়ালে। আমাদের সেই যৌথ ভাণ্ডার থেকে এবার সাতটি গান দিলাম। দুই বাংলার ভালো লাগবে- আশা তো করতেই পারি।’
‘বেঁচে থাকার মানে’ অ্যালবামের সব গানের সংগীতায়োজন করেছেন টুনাই দেবাশীষ গাঙ্গুলী। আর গানগুলোর শিরোনাম এমন- তুমি কি শেখাবে, সবুজ ছিল, তুমি আছো তাই, নেমেছে বৃষ্টি, এক সাহস কার, উপেক্ষিত ছাতা এবং আমার এক গোলাপ।
এদিকে নচিকেতার সঙ্গে পুরো অ্যালবাম করা প্রসঙ্গে খানিক স্মৃতিকাতর জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘আমার তখন বয়স কম। নব্বই দশকের প্রথম দিককার কথা। তার (নচিকেতা) গান শুনে কী যে মুগ্ধ হয়েছিলাম তা এখন বলে বোঝাবার মতো নয়! তার প্রতিটি গান জীবনের সহজ স্বাভাবিক কথাকে সুরে বাঁধানো এক একটি উপন্যাস বলেই মনে হয়েছে আমার! সেই প্রিয় শিল্পী নচিকেতা, যার কণ্ঠে গান শুনে দারুণ আলোড়িত হয়েছি- এবার তার অ্যালবামের জন্য গান লিখেছি! তাও একটি দু’টি নয়, পুরো অ্যালবাম-এর সব ক’টি! আশা করছি আমার মতোই শ্রোতাদের কাছেও গানগুলো পরম পাওয়া হয়ে থাকবে।’