
এম সাইফুল ইসলাম শাফলুঃ টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিদ্যালয়ের ৭২ লাখ টাকা আত্মসাতের চার্জশিটভূক্ত আসামি মো. লাল মিয়াকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপজেলার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ে এ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার এ অনিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য আমান উল্লাহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ এছাড়াও নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা হক অভিযোগ খতিয়ে দেখে নিয়োগের বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বছর তিনেক আগে বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফাজ উদ্দিন অবসরে গেলে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক লাল মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময়ের বিদ্যালয় বিদ্যালয়ের ৭২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আমান উল্লাহ বাদী হয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবদুল হালিম সরকার ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লাল মিয়াকে আসামি করে টাঙ্গাইল আদালতে মামলা করেন। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ বুরো ইনভেস্টিকেশন টাঙ্গাইলকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দেন। পিবিআই দীর্ঘ সময় তদন্ত করে সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে অর্থ আত্মসাতের আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মামলা চলাকালীন সময়ে গত ২০ এপ্রিল বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল হালিম সরকার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লাল মিয়াকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। গত ২৫ এপ্রিল লাল মিয়া প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ওইদিনই তড়িগড়ি করে কর্মে যোগদান করেন।
মামলার বাদী ও অভিযোগকারী আমান উল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি নিজেকে বাঁচাতে অর্থ আত্মসাতের আসামিকে প্রশ্ন ফাঁস করে দিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। নৈতিকভাবে আত্মসাতের মামলায় জামিনে থাকা আসামি ওই বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে পারেন না।
প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকারী ও সাক্ষাতকারবোর্ডে উপস্থিত হওয়া একাধিক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আমরা ওই বিদ্যালয়ে ২৩জন আবেদন করেছিলাম, অথচ পরীক্ষা দিয়েছি মাত্র ১০জন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে- এ ধরনের কথা শুনতে পেরে ১৩ প্রার্থীই উপস্থিত হয়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তাকেই প্রথম করে নিয়োগে অনিয়ম করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া লাল মিয়া বলেন, আমি যথা নিয়মে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েই নিয়োগ পেয়েছি। মামলা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা বিদ্যালয়ের কোনো টাকা আত্মসাত করিনি। তাই আইনি লড়াইয়ে অবশ্যই জয়ী হবো।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির ও নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি আবদুল হালিম সরকার বলেন, সবার সামনে প্রশ্ন করা হয়েছে। স্বচ্ছভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের প্রশ্নই উঠে না।
সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী সরকার রাখী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা হক বলেন, ইউএনও বরাবর করা একটি লিখিত অভিযোগ আমার হাতে এসেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন
-
"নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল
SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।