ঢাকা কেরানীগঞ্জের ফজলুল হক, পরিবারের অভাব-অনটন দূর করতে ৭ বছর আগে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। মেধা আর দক্ষতা দিয়ে সেখানে খুব অল্প সময়ে নিজেই রঙের কাজ ধরে মানুষ দিয়ে কাজ করানো শুরু করেন। ধীরে ধীরে ভালো একটি অবস্থানে চলে যান তিনি।
সবকিছু ঠিকঠাক চললেও দিনদিন তার ছেলে অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে, এমন খবর প্রবাসী এই বাবার কানে আসে। তখন ছেলেকে নিয়ে বাবা চিন্তা করবেন এমনটাই স্বাভাবিক, অনেক চেষ্টা করেও ছেলেকে তার মনের মতোন গড়ে তুলতে পারেননি। পারেননি লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতোন মানুষ করতে। একপর্যায়ে ছেলেকে কোনো এক কারণে জেলেও যেতে হয়। আর এসব কিছু সহ্য করতে না পেরে ছেলেকে পাঠিয়ে দেন বাহরাইন।
সেখানে গিয়েও বেশিদিন থাকতে পারেনি তার ছেলে। পাশাপাশি তার স্ত্রীর কাছে পাঠানো টাকা-পয়সারও কোনো প্রকার হিসাব পাচ্ছিলেন না তিনি। তার সাজানো সংসারটা যেন অগোছালো হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। স্ত্রী ও ছেলের এমন চলাফেরা দিন দিন বেড়ে যাওয়াতে বেশ ভেঙে পড়েন ফজলুল। একবার স্ট্রোক করেন তিনি। ছেলেকে নিয়ে আসেন সৌদিতে নিজের কাছে। তারপরও যেন কোনোভাবে সুখ খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। কারণ পরিবারের উপার্জনের মাধ্যম তিনি হলেও পরিচালনা ছিল তার স্ত্রীর হাতে। আর সে পরিচালনায় বিশ্বাসঘাতকতার প্রমাণ পেয়ে দিনদিন অসুস্থ হয়ে যান ফজলুল।
একপর্যায়ে তার চোখের আলো নিভে যায়, ডাক্তারের কাছে গেলে মানসিক চাপের কথা উঠে আসে, আর সেটিই হলো। মানসিক চাপ থেকে মানসিক রোগী হয়ে গেলেন এক সময়ে লাখ লাখ সৌদি রিয়াল কামানো এই মানুষটি। আর এভাবে যতই তার অবস্থার অবনতি হয় ততো তার কাছ থেকে দূরে সরে যান কাছের মানুষরা।
কিন্তু বিদেশে এভাবে কী করে থাকবেন একা একজন মানুষ? কে করবেন তার সেবা? কারণ সবারই নিজ নিজ কাজ থাকে এ দেশে। যেখানে আপন লোকেরা পাশে নেই, সেখানে পর কী করে আপন হবে।
কোনো পথ আর উপাই না পেয়ে ফজলুল হক আশ্রয় নেন রিয়াদের ইশারা ডিরেক্টরের পার্শ্ববর্তী একটি পার্কে। কী রোদ, কী বৃষ্টি, নিয়মিত ধুলাবালি গরম সবকিছুকে সঙ্গী করে এক মাস ধরে পড়ে আছেন পার্কে। একমাত্র ছেলে, যাকে সৌদি আরব এনেছিলেন, সে ছেলেও কোনোপ্রকার খোঁজ নিচ্ছেন না বাবার। ছেলের মান-সম্মানে বাধে, কারণ তার বাবা মানসিক রোগী, আর সে কাজ করে নাম করা ব্র্যান্ড পিজ্জা হাটে।
কাছের মানুষরা চলে গেলেও দূরের বন্ধু, যাদের সঙ্গে বিদেশে আসার পর পরিচয় এবং এলাকার কিছু পরিচিত মুখ এখন ফজলুলের এমন অবস্থার কথা শুনে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাকে নিয়ে দূতাবাসে যান। কাগজপত্র সব ঠিকঠাক করে কফিলের (মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকের মালিককে কফিল বলে) সঙ্গে যে সমস্যা ছিল তার সমাধান করেছেন। দেশে পাঠিয়ে দেবেন এমন মুহূর্তে জানতে পারেন ফজলুলের নামে গাড়ির একটি মামলা রয়েছে, তিনি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর যখন স্মরণশক্তি কমে আসে, তখন তার কাছে থাকা ভাড়া গাড়ির জমা বাকি থাকাতে এ মামলা হয়।
আর সে মামলার সমাধান করে দেশে যেতে তার আরও কিছুদিন লাগবে। মামলা সমাধানের জন্যও প্রায় ৩ লাখ টাকার প্রয়োজন এবং সে টাকারও ব্যবস্থা করছেন বর্তমানে যারা ফজলুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা।
আর সে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ফজলুল কি পার্কেই পড়ে থাকবেন, এমন প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে ফিরে আসতে হলো এই প্রতিবেদককে। ফিরে আসার আগে ফজলুল কেঁদে কেঁদে বলেন, দেশে যেয়ে তার অসুস্থ মাকে দেখবেন। এর বাইরে কারোর প্রতি তার কোনো অভিযোগ নেই।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।