নিজস্ব প্রতিবেদক: অপরাধ না করেও মিথ্যা মামলায় ১৬ বছর কেটেছে কাশিমপুর কারাগারে কেটেছে তারিফুল ইসলামের। ২ মাসের সন্তান মোবিন ইসলাম এখন ৯ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। হারিয়েছেন শ্বশুর-শ্বাশুরিসহ অনেক আত্মীয়স্বজন। শেষবারের মতো দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাদের মুখ। কারাগারের বন্দিজীবনে বাইরে আলো দেখার আশা ছেড়েই দিয়ে ছিলাম। মাঝে মধ্যে আন্দোলন হতো তখন আশা জাগতো। কিন্তু স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার তা দমন করে দিলে আশা ভেস্তে যায়।
সস্প্রতি গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনার পতনের খবরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন জাগে। আজ যাদের জন্য বাইরের আলো দেখা সেই ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। পুনরায় চাকরিতে যোগদানের আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সীমান্তের অতন্দ্র এ প্রহরী।
তারিফুল ইসলামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফসলান্দি গ্রামে। আলম ও খোদেজা দম্পত্তির ছেলে। ২০০৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ১০ রাইফেল ব্যাটালিয়নে যোগ দেন তিনি। গত ২৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বেলা দুপুর ২ টায় নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় পা রাখেন তারিফুল ইসলাম। এ সময় তাকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশের।
পরিবার সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি মির্জা লিমাকে বিয়ে করেন। ওই বছরেরই ২২ ডিসেম্বর মোবিন নামে এক পুত্র সন্তানের বাবা হন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী বিডিআর বিদ্রোহের আগের দিন কর্মস্থল বান্দরবান থেকে ঢাকার পিল খানায় খেলাধুলার প্রশিক্ষণের জন্য যান সৈনিক তারিফুল। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সকালে গুলির শব্দ পান। ভিতরে গিয়ে দেখতে পান অস্ত্রধারীদের। তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে বলে বিডিআর সদস্যদের।
এরপর যোগ দিতে বলে অপারেশনে, হুমকি দেওয়া হয় প্রাণে মেরে ফেলার। অস্ত্রধারী অধিকাংশই ছিলো কম উচ্চতার। আবার কেউ কেউ ছিলো অধিক উচ্চতা সম্পন্ন। তাদের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। তারা বিডিআর সদস্য ছিল না। আমরা যে অস্ত্র ব্যবহার করতাম অপারেশন অপারেশনে অংশ নেয়া সন্ত্রাসীদের সে ধরণের অস্ত্র ছিল না।
তারিফুল ইসলামের একমাত্র সন্তান ১৬ বছর বয়সী মোবিন জানায়, আমার ২ মাস বয়স থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মিথ্যা মামলায় আব্বু কারাগারে ছিলেন। এতো বছর পর আব্বুকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরতে পেরে কি যে আনন্দ লাগছে তা ভাষায় করতে পারব না। আব্বুর হারানো চাকরিটা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
স্ত্রী মির্জা লিমা জানান, বিয়ের ১ বছর পরেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিনা দোষে কারাগারে যেতে হয়েছে আমার স্বামীকে। দীর্ঘ ১৬ বছর কি যে যন্ত্রণায় কেটেছে তা বলতে পারবো না। মেয়ের জামাইয়ের শোকে শেষ পর্যন্ত আমার মা-বাবা মারাই গেলেন। অপরাধ না করেও বিনা দোষে কারাগারের ১৬টি বছর কে ফিরিয়ে দিবে?।
তারিফুলের বাবা শাহ আলম ও মা খোদেজা জানান, ছেলেকে যে এভাবে পাবো তা ভাবিনি। মহান আল্লাহ তাআলা ওকে (তারিফুলকে) বুকে ফিরিয়ে দেয়ায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। এদিকে, তারিফুলকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন তার আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী। তাকে দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার আসল রহস্য উন্মোচন করে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দাবি করেন।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।