মঙ্গলবার, মার্চ ২১, ২০২৩
Homeটাঙ্গাইল জেলাটাঙ্গাইলে পাউবো'র নদীর পাড় কেটে বালু বিক্রি, বালু ব্যবসায়ীরা মানছে না নিষেধাজ্ঞা

টাঙ্গাইলে পাউবো’র নদীর পাড় কেটে বালু বিক্রি, বালু ব্যবসায়ীরা মানছে না নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের ১৩.৬ কিলোমিটার এলাকা ৪ লেন উন্নতীকরণ প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ চলছে। মহাসড়ক উন্নতীকরণ ওই প্রকল্পে মাটি-বালু বিক্রি করে লাভবান হতে প্রভাবশালীদের যোগসাজসে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পাউবোর পুনরুদ্ধারকৃত ১৬৮ একর ভূমির অংশ কেটে নিউ ধলেশ্বরীর সমান্তরালে পৃথক কৃত্রিম নদী তৈরি করেছে অসাধু স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদী খনন ও পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্পের আওতায় নিউ ধলেশ্বরী নদীর বামতীরে কালিহাতী উপজেলার বিনোদ লুহুরিয়া, কুর্শাবেনু ও কদিমহামজানী মৌজার ১৬৮ একর ভূমি পানি উন্নয়ন বোর্ড পুনরুদ্ধার করে। ওই প্রকল্পে অবাধ পানি প্রবাহ সৃষ্টিতে পাউবো ওই এলাকায় আরও ৩৪ দশমিক ১৯ একর ভূমি অধিগ্রহন করে। কিন্তু গত বর্ষায় নিউ ধলেশ্বরী নদীতে পলি জমে চর জেগে উঠায় পাউবো ওই ভূমিতে ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ রোপনের উদ্যোগ নেয়।

বিনোদ লুহুরিয়া মৌজায় গত ২২ সেপ্টেম্বর ঘটা করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার (বর্তমানে মন্ত্রী পরিষদ সচিব) পুনরুদ্ধারকৃত ভূমিতে গাছ লাগানো কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। কিছু এলাকায় বিভিন্ন জাতের দুই হাজার ৮৬০টি ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছের চারা রোপন করা হয়। ওই সময় তিনি জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘অবৈধ দখলদারদের কোন মূল্যেই ছাড় দেওয়া হবেনা। জবরদখলকারী হাজারি বা মনি যার লোকই হোন না কেন- অবৈধ হলে তাকে ছাড় দেওয়া তো দূরের কথা, আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে’।

এরই মধ্যে এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের ১৩.৬ কিলোমিটার এলাকা চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মাটি-বালু না পেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বালু ব্যবসায়ীদের শ্বরনাপন্ন হয়। স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পাউবোর পুনরুদ্ধার ও অধিগ্রহনকৃত ভূমি থেকে মহাসড়ক উন্নয়নে মাটি দেওয়ার প্রয়াস পায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম, চান মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল বাছেদ, গোলজার হোসেন, ইউসুফ আলী, মাসুদ রানা ও নুরুল ইসলামের (মেম্বার) নেতৃত্বে কুর্শাবেনু ও কদিমহামজানী মৌজার নিউ ধলেশ্বরী নদীতীর ও পাশে নদীর আকারে মাটি-বালু কেটে সমান্তরাল একটি কৃত্রিম নদী সৃষ্টি করে ফেলেছে। ফলে নিউ ধলেশ্বরী নদীর মুখ (অফটেক) থেকে ডান ও বাম তীরের ১৯টি গ্রামে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কুর্শাবেনু গ্রামের কামরুল, বেলাল হোসেন, কদিমহামজানীর নওশের আলী, শরীফুল, রিপন সহ আরও অনেকে নাম প্রকাশ না করে জানান, বালু ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায়না। প্রতিবাদ করলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা সহ নানা রকম হয়রানী ও মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়। মূলত বালু ব্যবসায়ীরা উন্নয়নের কথা বলে বালু-মাটি উত্তোলন ও সরবরাহ করছে। এ কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

এছাড়া নদী তীরের ওই স্থানগুলো দুর্গম হওয়ায় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা সরেজমিনে পরিদর্শনও করতে পারে না। তবে অধিকাংশ সময়ই প্রতিবাদকারীদের টাকার লোভ দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। যারা কথা না শোনে তাদেরকে ভিন্ন পন্থায় শায়েস্তা করা হয়।

টাঙ্গাইল পাউবোর একটি সূত্র জানায়, ওই এলাকার ঘরে ঘরে বালু ব্যবসায়ী। তারা অধিকাংশ সময় পাউবোর ভূমি থেকে মাটি-বালু উত্তোলন করে থাকে। পাউবোর পক্ষ থেকে বার বার সতর্ক বাণী দেওয়া হলেও তারা কর্ণপাত করে না। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েও সময়মত বা প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায়না। এ জন্য বেশিরভাগ সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।

গোহালিয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ ও সল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম জানান, নদী কেটে কেউ বালু-মাটি মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে বিক্রি করছেন এমনটা তারা জানেন না। অনেকে নিলামকৃত বালু বিক্রি করেছেন। সেগুলো ড্রেজারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। নদীতীর কেটে মাটি-বালু বিক্রি করলে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন দেখা দেবে এটা নিশ্চিত। পাউবো কর্তৃক পুনরুদ্ধারকৃত ভূমি কেটে মাটি-বালু বিক্রি করছে এমন কোন খবর তারা জানেন না।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, তিনি সবেমাত্র এখানে যোগদান করেছেন- তাই এ বিষয়ে কিছু জানেন না। পাউবোর সম্পত্তি রক্ষায় মহান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ওই সম্পত্তিতে মাটি-বালু কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ।
কেউ দখল বা ভোগদখল করলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি পাউবোর ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইমদাদুল হককে ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -