বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
Homeটাঙ্গাইল জেলাসখিপুরসখীপুরে পোল্ট্রি শিল্পে অবিস্মরণীয় উত্থান; সম্ভাবনাময় একটি বিশাল খাত হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প

সখীপুরে পোল্ট্রি শিল্পে অবিস্মরণীয় উত্থান; সম্ভাবনাময় একটি বিশাল খাত হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প

এম সাইফুল ইসলাম শাফলু: টাঙ্গাইলের সখীপুরে দ্রুত বিকাশমান এবং বহুমুখি সম্ভাবনাময় একটি বিশাল খাত হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প। এই শিল্প একই সঙ্গে সখীপুরে নতুন নতুন আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দিনদিনই উদ্যোক্তা তৈরি করছে। এখানকার উৎপাদিত মাংস ও ডিম দেশের বিপুল বর্ধিষ্ণু জনশক্তির পুষ্টিও চাহিদা মিটাচ্ছে।এছাড়াও ওইসব পোল্ট্রি খামারে মুরগির বিষ্টা দিয়ে এখন বায়োগ্যাস ছাড়াও তৈরি হচ্ছে জৈব সার। যা কৃষিকাজে ফসল উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।

এ খাতে এ উপজেলার হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। সমগ্র উপজেলা জুড়েই পোল্ট্রি শিল্পের ক্ষেত্র বিস্তৃত বড় হচ্ছে নীরবে নিভৃতে। বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত শ্রম আর সাধনায় এসেছে সাফল্য, ঘটেছে নীরব বিপ্লব।

সম্প্রতি এ উপজেলার তিন সহস্রাধিক খামারীদের নানা সমস্যা, সম্ভাবনাসহ এ শিল্প খাতের নানাদিক উঠে এসেছে। অনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে সখীপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ছোট বড় প্রায় তিন হাজারেরও বেশি পোল্ট্রি খামার গড়ে ওঠেছে। এদের মধ্যে ৬শ’ ৬৯টি নিবন্ধনকৃত বাকিগুলো নিবন্ত্রণ পক্রিয়াধীন। সখীপুর এখন এ দেশের পোল্ট্রি শিল্পের প্রধান অঞ্চল হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। এখানকার ডিম ও মাংসের মুরগী কিনে নিতে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের আড়তদাররা প্রতিনিই শতাধিক ট্রাক করে ডিম, লেয়ার এবং বয়লার মুরগী দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। দেশের চাহিদার সিংহভাগ ডিম ও মাংসের যোগান দিচ্ছে এ অঞ্চল থেকে।

অপরদিকে ডিম ও মাংসের বাজারজাত ব্যবস্থায় প্রান্তিক খামারীরা মধ্যসত্ত্বভোগী বা সিন্ডিকেটের কাছে এক প্রকার জিম্মি। এতে খামারীরা তাঁেদর ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একদিকে খাদ্যে ও ওষুধে ভেজাল, তুলনামূলকভাবে উৎপাদন কম, অন্যদিকে বেশি দামে একদিন বয়সী লেয়ার ও ব্রয়লার বাচ্চা কেনা, ডিম ও মুরগী বিক্রিতে নানা সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ে প্রান্তিক খামারীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ডিলার ও হ্যাচারী মালিকের কারসাজিতে একদিন বয়সী লেয়ার বাচ্চা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় এবং একদিন বয়সী ব্রয়লার বাচ্চা ৯০ থেকে ১০০ টাকায় খামারীদের কিনতে হচ্ছে। যা প্রান্তিক খামারীদের কাছে এটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে খাদ্য ডিলারদের সিন্ডিগেটের কারণে এক রকম বাদ্য হয়েই ভেজাল খাদ্য ও নাম স্বর্বস্ব নানা ওষুধ কোম্পানির নিন্মমানের ভেজাল ওষুধ খাওয়ানোয় বাধ্য হচ্ছে। পোল্ট্রি খামারীকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ম নীতিহীনভাবে অসংখ্য ওষুধের দোকান গড়ে ওঠেছে। এদের অধিকাংশ ওষুধের দোকানের নেই ড্রাগ লাইসেন্স বা ফার্মাসিস্ট। ওষুধ ব্যবসায়ী ও খাদ্য ডিলাররাই এখন খামারীদের কাছে হয়ে ওঠেছে পরামর্শক আর চিকিৎসক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী ও খাদ্য ডিলার বলেন, বেশির ভাগ খামারীরা বাকিতে ওষুধ এবং খাদ্য নিয়ে থাকেন। যেহেতু পোল্ট্রি খামার একটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা এক্ষেত্রে আমরাও কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনা। তাছাড়া ভালো মানের কোম্পানির ওষুধে লাভ খুবই কম।
উপজেলার বহুরিয়া চতল গ্রামের পোল্ট্রি খামারী আসাদুজ্জামান শাহজাহান বলেন, ওষুধ ও খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রমটি ভেজালমুক্ত হলে সখীপুরে আরো ব্যবসা এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

বেতুয়া গ্রামের সফল পোল্ট্রি খামারী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিদিন আমার একটি খামারে ১২’শ মুরগীর মধ্যে সাড়ে ১১’শ মুরগী ডিম দেয়। আরও একটি নতুন খামার করার কাজ শুরু করেছি। অন্য কোন ব্যবসার চেয়ে এ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বেকার যুবকরা এ ব্যাবসায় এগিয়ে আসছেন।

উপজেলা ‘পোল্ট্রি শিল্প’ মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম খান বলেন, নানা সিন্ডিকেট ও ভেজালে এ উপজেলার বেশ কিছু খামার বন্ধ হওয়ার পরও এ শিল্পের অগ্রগতি থেমে থাকেনি। ডিলার ও হ্যাচারী মালিকের কারসাজিতে একদিন বয়সী লেয়ার বাচ্চা সরকারিভাবে বেধে দেওয়া মূল্যের তিনগুণ টাকায় কিনতে হচ্ছে খামারীকে। খামারীদের বাঁচাতে তিনি দ্রুত সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ, বীমা প্রথা চালু এবং পোল্ট্র্রি নীতিমালা বাস্তবায়নেরও দাবি জানান।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জলিল বলেন , ওষুধ ব্যবসায়ী ও খাদ্য ডিলারদের নানামুখি সুবিধার প্রতিশ্রুতি পেয়ে খামারীরা তাদের কাছে তেমন একটা আসেন না। ওইসব ওষুধ ব্যাবসায়ী মুরগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োগের মাত্রা এবং চিকিৎসার সঠিক ধরন না জেনেই উচ্চ মাত্রার যত্রতত্র ‘এ্যন্টিবায়োটিক’ প্রয়োগ করাচ্ছেন। এতে মাংস ও ডিম উৎপাদন দিনদিনই কমে আসছে। খামারীরা হচ্ছেন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন।

তিনি আরো বলেন-বেশি মুনাফার আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বিকল্প হিসেবে নিন্মমানের কোম্পানির ওষুধ ধরিয়ে দেন খামারীদের। এতে ওই অসাধু ব্যবসায়ীর ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মুনাফা বেশি হয়। পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ও সফলতার পেছনে অবশ্যই খামারীদের ভেজাল খাদ্য এবং ভেজাল ওষুধ পরিহার করে প্রাণি সম্পদ বিভাগের চিকিৎসকদের পরামর্শ গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -