এম সাইফুল ইসলাম শাফলু : টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ইরি প্রকল্পগুলো এখন সরিষা ফুলে সমৃদ্ধ। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদের সমারোহ। বন্যার পানি নেমে যাবার পর ইরি ধানের চারা রোপণের পূর্বে এখানকার জমিতে বপন করা হয় সরিষা বীজ। সরিষা গাছ বড় হবার পাশাপাশি এর মাথায় ফোটে হলুদ ফুল। আর এই ফুল মধু উৎপাদনের প্রধান উৎস। মৌ-চাষিরা সরিষা ক্ষেতে শুরু করেছে কৃত্রিম মৌ-চাষ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সখীপুর উপজেলার যাদবপুর, বেড়বাড়ী, রতনপুর, চাকদহ, কাঙ্গালিছেও, দাড়িয়াপুর,কুমড়াঝুড়ি, কামালিয়াচালা,বেতুয়া,কালিয়া, ইন্দারজানী,বহেড়াতৈলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সরিষা ক্ষেতের ফাঁকা জমিতে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে মৌ-মাছির বাক্স। দিনের বেলায় মৌমাছি সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে মৌ সাজায়। এক সপ্তাহের মধ্যেই মধুতে ভরে যায় মৌচাক। গত পনের দিনে ওইসব অঞ্চলে প্রায় এক হাজার মৌমাছির বাক্স বসিয়ে প্রায় ১’শ মণ মধু উৎপাদন করেছে মৌ-চাষিরা। এতে প্রতি কেজি মধু বিক্রি করছে ৩’শ টাকা থেকে ৪’শ টাকা ধরে। এতে গত ১৫ দিনে প্রায় ১৫ লাখ টাকা বিক্রি করেছে মৌ-চাষিরা। সামনের মাসে সখীপুর থেকে মৌ-চাষিদের প্রায় ৪’শ মণ মধু সংগ্রহের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা জানান।
উপজেলার চাকদহ গ্রামের মৌ-চাষি আলী আকবর বলেন, তাঁর খামারে ১০২টি বাক্স বসানো হয়েছে। ওই বাক্স থেকে গত ১৫ দিনে প্রায় ১৮ মণ মধু উৎপাদন হয়েছে। আগামী এক মাসে এখান থেকে প্রায় ৪০ মণ মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান। প্রতি কেজি মধু পাইকারী দরে সে ৩’শ টাকা ধরে করে বিক্রি করছেন।
কাঙ্গালীছেও গ্রামের মৌ-চাষি কাশেম মিয়া বলেন, আমি ৮০টি বাক্স বসিয়েছি। আমার এক সপ্তাহে ১২ মণ মধু উৎপাদন হয়েছে।
অন্য মৌ-চাষিরা জানান, বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং যাদের মৌ-চাষে অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের কোন দিন অলসতায় পায় না। মৌ-মাছির বংশ বিস্তার মধু সংগ্রহ ও ফ্রেম থেকে মোম পাওয়া যায় তা সবই বিক্রি করা যায়। যার ফলে মৌ-চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। সরিষা ফুলের মধু যেমন খাঁটি তেমনি সুস্বাদু। মানের দিক থেকেও উন্নত হয়। এ মৌসুমে মধুর চাহিদাও বেশি থাকে। আবহাওয়া ভালো থাকলে মধু উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য হয়। তবে মৌমাছি সংরক্ষণে অনেক সময় চাষিদের সংকটে পড়তে হয়। বিশেষ করে প্রচন্ড শীতে অনেক মাছি মারা যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফায়জুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, মৌ-চাষ করলে যেমন একদিকে চাষিরা লাভবান হয়। অন্যদিকে মৌ-মাছি সরিষার পরাগায়ণে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে। এতে সরিষার আবাদও বৃদ্ধি পায়।