বাবা-মা দুজনেই কলেজ শিক্ষক। আর তাদের মুখ উজ্জ্বল করতে যাচ্ছে সন্তান নাফিস উল হক সিফাত। শুধু তার বাবা এবং মা-ই নয়। গোটা দেশেও ঝড় তুলেছেন নাফিস। জন্ম চাঁদপুরে। অথচ কিছুদিন পর পড়তে যাচ্ছে বিশ্বের সেরা বিদ্যাপীঠ এমআইটিতে।
গণমাধ্যমকে নাফিস জানালেন, কখনো ভাবিনি বিশ্বের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) পড়ার সুযোগ পাব। তাই আমি অনেক সৌভাগ্যবান বটে। কারণ, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর একজন বা দুজন এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পান। তবে এবার আমিই একমাত্র এই সুযোগটি পেয়েছি। এতে আমি অবাকও হয়েছি। আর আনন্দ তো আছেই। এমন সুযোগ পাওয়ার জন্য বাবা-মা, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে কৃতজ্ঞ নাফিস।
এমআইটিতে সুযোগ পাওয়া চাঁদপুর সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাফিস উল হক ওরফে সিফাত।
জানা যায়, বাংলাদেশি পড়ুয়াদের মধ্যে নাফিস সবচেয়ে কম বয়সে এইচএসসিতে পড়ালেখা অবস্থায় এমআইটিতে আন্ডারগ্রাজুয়েটে (স্নাতক) পড়ার সুযোগ পান। গত ১৫ মার্চ তার এই কনফারমেশন লেটার হাতে আসে এমআইটি থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর শহরের ষোলঘর এলাকায় কলেজ শিক্ষক বাবা-মায়ের সঙ্গে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন নাফিস। তার দাদার বাড়ি জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার নওগাঁ এলাকায়।
তার বাবা নাসির উদ্দিন মতলব রয়মনেনসা মহিলা কলেজে ও মা কামরুন নাহার হাজীগঞ্জ মডেল কলেজে শিক্ষকতা করেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বড় বোন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। বিগত ২০২১ সালে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি। তার ছোট ভাই চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি স্কুল থেকে এবারে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা রয়েছে।
নাফিস জানালেন, ছোট বেলা থেকেই স্বপ্নও ছিল কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করার। সে লক্ষ্য নিয়ে সব সময় বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতাম। এ জন্য আমি ফলো করতাম বিখ্যাত ব্যক্তি ও গুণী মানুষদের।
তবে কখনোই নির্দিষ্ট করে এমআইটির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কারণ অনেক ট্যালেন্ট ছাড়া এমআইটিতে কেউ সুযোগ পান না। তাই কনফিডেন্টও ছিলাম না এমআইটিতে সুযোগ পাব। তারপরও আমি ট্রাই করেছি। দেখি কি হয়। শেষ পর্যন্ত দেখলাম সত্যি সুযোগ পেয়েছি। এতে মনে করি আমি অনেক সৌভাগ্যবান। তবে আমার পছন্দ কম্পিউটার প্রোগরামিং বা এই টাইপের কাজকর্ম।
জীবনে কিছু মানুষের এবং স্যারদের অনেক কন্ট্রিবিউট বা অবদান রয়েছে। তার মধ্যে জাফর ইকবাল স্যার, কায়কোবাদ স্যার, সোহেল স্যার। তাদের সান্নিধ্যে থেকে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি, শিখতে পেরেছি। আমি সব সময় চেয়েছিলাম স্যারদের মতো হই।
কারণ, ছোটবেলা থেকে আমি অনেক অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছি। ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্স (আইওআই) এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করি।
এদিকে, প্রিয় ছাত্রের এই সফলতায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এই সময় চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ বলেন, আমার কলেজের নাফিস এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। সেটা তার চেষ্টা ছিল। কারণ, সে সব সময় বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা বা গবেষণার আগ্রহ ছিল। সেটারই প্রতিফলনে এটা হয়েছে। শুধু আমার কলেজে নয়। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ রকম অনেক সিফাতকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে আজ শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজে নাফিসকে ফুল দিয়ে বরণ নেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এই সময় মেধাবী এই শিক্ষার্থী সম্পর্কে তিনি বলেন, ছেলেটি শুধু চাঁদপুরের নয়, পুরো বাংলাদেশের গর্ব। কারণ, সে এদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তার আরো সফলতার জন্য সব সময় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন শিক্ষামন্ত্রী।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাসির উদ্দিন আহম্মদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল, পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, পুরানবাজার কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।