নিউজ ডেস্ক: টাঙ্গাইলে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বৃদ্ধকে মারধর ও তার স্ত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তিন প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। এছাড়া হামলাকারীদের বিরুদ্ধে নির্যাতিতদের জমির মাসকলাই কেটে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার হুগরা ইউনিয়নের মালতিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে রাতে অভিযুক্ত নাইম, শাহজাহান ও নাজমা বেগমের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নির্যাতিত স্বামী-স্ত্রী।

অভিযোগে জানা যায়, নির্যাতিত দুলাল মিয়ার (৬০) পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী শাহজাহান মিয়া (৬৫), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৫২) ও ছেলে নাইম মিয়াদের (৩০) সঙ্গে বিরোধ চলে আসছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এর জেরে বৃদ্ধ দুলাল মিয়ার ওপর হামলা চালান তারা। হামলার শুরুতে নাইম মিয়া দুলাল মিয়ার মাথায় রড দিয়ে আঘাত করেন। এছাড়া শাহজাহান ও নাজমা বেগম হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে মারধর করতে থাকেন।

এসময় দুলাল মিয়াকে বাঁচাতে গেলে শাহজাহান মিয়াসহ হামলাকারীরা বৃদ্ধের স্ত্রী পারভীনকে বিবস্ত্র করে মারধর করেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে পাঠায়।

নির্যাতিত বৃদ্ধ দুলাল মিয়া বলেন, আমি প্রায় ১৭ বিঘা জমির মালিক। এর মধ্য থেকে সাড়ে ২৭ শতাংশ জমি রছো নামের স্থানীয় এক কৃষককে বর্গা দিই। বর্গা নেওয়া ওই জমিতে কৃষক রছো মাসকলাই আবাদ করেন। শুক্রবার ওই মাসকলাই কাটতে যান রছো। এসময় প্রতিবেশী শাহজাহান, নাজমা বেগম ও নাইম ফসল কাটতে বাধা দেয়।

তিনি বলেন, সন্ধ্যার সময় এ খবর পেয়ে আমি জমিতে গেলে শাহজাহান, নাজমা ও নাইম আমাকে মারধর করতে শুরু করে। এসময় আমাকে বাঁচাতে স্ত্রী এগিয়ে এলে তারা আমার স্ত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালায়। এর আগেও তারা আমাকে কয়েক দফায় মারধর করাসহ পুকুরে ছাড়া মাছ বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছে। জমি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার কয়েক দফায় শালিস করেও কোনো সুরাহা দিতে পারেননি। জমির কোনো কাগজপত্র না থাকা সত্ত্বেও তারা মালিক দাবি করে আমার ওপর এইভাবে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

নির্যাতিত বৃদ্ধা পারভীন বলেন, আমার প্রতিবন্ধী একটি ছেলে সন্তান আছে। আমার স্বামীর অনেক সম্পত্তি থাকায় প্রতিবেশী কয়েকজন সেগুলো ভোগ দখলের চেষ্টায় দফায় দফায় নির্যাতন করে চলেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই প্রতিবেশীরা আমাকে বিবস্ত্র করাসহ আমাকে ও স্বামীকে লোহার রড, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে মারধর করেছে। আমি দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।

তবে অভিযুক্ত নাইম বলেন, আমাদের জমির মাসকলাই কাটতে যাওয়ায় বাধা দিই। এসময় আমার চাচাত ভাই দুলাল লাঠি নিয়ে আমার বাবাকে মারতে যান। এসময় ঠেকাতে গেলে ওই লাঠির আঘাতে দুলালের মাথা ফেটেছে। আমরা কাউকে মারধর করিনি।

হুগড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, গতকাল রাতে দুলাল মিয়াকে মারধরে বিষয়টি আমি শুনেছি। হামলার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কেননা শাহজাহান মিয়া দুলাল মিয়ার চাচা। এছাড়া কাগজপত্রে আমরা দেখেছি, জমিটির প্রকৃত মালিক দুলাল মিয়া। শাহজাহান মিয়া জোর করে জমির মালিকানা দাবি করছেন। এ নিয়ে কয়েক দফায় শালিস হয়েছে। তবে শালিসের রায় মানেননি শাহজাহান মিয়া। পরে বাধ্য হয়ে দুলাল মিয়া আদালতে মামলা করেছেন।

এ বিষয়ে হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরে আলম তুহিন বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান বলেন, হুগড়া ইউনিয়নের মালতিপাড়ার জমি নিয়ে বিরোধে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর ওপর হামলা ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে থানার উপ-পরিদর্শক মুরাদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।